কুমারগঞ্জের দলীয় কর্মিসভায় অর্পিতা ঘোষ। ছবি: অমিত মোহান্ত।
একজন সম্বত্সর ঘাম ঝরাবেন। ফসল ঘরে তুলবেন অন্যজন। ভোটের মুখে এমন সম্ভাবনায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। বিশেষত, দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র লোকসভা ভোটের টিকিট না-পাওয়ায় একান্তে তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীই ‘দুঃখের কথা’ বলে বেড়াচ্ছিলেন। বুধবার বালুরঘাটের কুমারগঞ্জের কর্মিসভায় তা আর চাপা থাকল না। ভিড়ে-ঠাসা সভায় দলের প্রার্থী নাট্য ব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষের বক্তব্য ফুরোতেই এক তৃণমূল সমর্থক চেঁচিয়ে প্রশ্ন করলেন, “জেতার পরে জেলায় থাকবেন তো? জেলায় আপনাকে দেখা যাবে তো?”
এর পরে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে তেতে উঠেছে কর্মিসভা। কেন এমন প্রশ্ন করা হল তা নিয়ে বাদানুবাদ শুরু হয়েছে। যা দেখেশুনে খোদ বিপ্লব মিত্র বিব্রত হয়ে পড়েন। তাতেও প্রশ্নকর্তাকে নিরস্ত করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত প্রশ্নকারী ওই সমর্থককে তড়িঘড়ি ভবন থেকে বের করে নিয়ে যান সতীর্থরা। বাইরে গিয়েও তাঁকে ক্ষোভের সঙ্গে চেঁচাতে শোনা যায়, “কতদিন এ রকম চলবে? একজন সারা বছর জমিতে হাল দেবেন। চাষ করবেন। ফসল তোলার সময় বাইরের কেউ দায়িত্ব পাবেন। ফসল তোলার পরে আর দেখা মিলবে কি না সেটা জানতে চাইব না?” ওই ক্ষুব্ধ সমর্থককে প্রায় জোর করে তৃণমূল কর্মীরা অন্যত্র নিয়ে চলে যান।
তবে ‘বহিরাগত’ প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে দলের অন্য নেতা-বিধায়কদেরও। এ দিন স্থানীয় বিধায়ক মাহমুদা বেগম ছাড়া দলের আর কোনও বিধায়ককে মঞ্চে দেখা যায়নি। গঙ্গারামপুরের বিধায়ক সত্যেন রায়ের বক্তব্য, “কর্মিসভার বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। গঙ্গারামপুরে উনি (অর্পিতা) থাকছেন। অথচ আমিই জানলাম না!”
বালুরঘাট আসন বরাবরই বাম দুর্গ বলে পরিচিত ছিল। গত লোকসভা নির্বাচনে জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু নিজেই প্রার্থী হ’ন। মাত্র পাঁচ হাজার ভোটে তিনি হেরে যান। বিপ্লববাবুর নেতৃত্বেই গত বিধানসভা ভোটে জেলার পাঁচটি আসন বামেদের থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। দু’দশকেরও বেশি বামেদের হাতে-থাকা বালুরঘাট পুরসভা গত বছর তৃণমূল দখল করে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ দখল করে তৃণমূল। জেলায় একের পর এক নির্বাচনে সাফল্যের অন্যতম কান্ডারি বিপ্লববাবুকেই লোকসভায় দল প্রার্থী করবে বলে তৃণমূলে জল্পনা ছিল। দলের জেলা নেতা-কর্মীরা সেই মতো প্রচারও শুরু করে দিয়েছিলেন। সে কারণে দলের শীর্ষ নেতাদের সিদ্ধান্ত অনেকের না-পসন্দ বলে দলে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে।
ঠিক কী ঘটেছে এ দিন?
প্রার্থীপদ ঘোষণার পরে বুধবারই জেলায় আসেন নাট্যকর্মী অর্পিতা। দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের সঙ্গে বিকেল পৌনে তিনটে নাগাদ উত্সব ভবনের কর্মিসভায়। সভার শুরুতেই প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন দলের জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু। এরপরে মিনিট সাতেকের বক্তৃতায় অর্পিতা বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন। আমাকে আপনাদের সৈনিক ও সঙ্গী করে নিন।” কর্মীদের অর্পিতার আহ্বান, “আপনারাই এক একজন অর্পিতা ঘোষ।” বক্তৃতা শেষ হতেই এক তৃণমূল সমর্থক ওই প্রশ্ন করে বসেন। শুরু হয় তুমুল চিত্কার। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কর্মীদের শান্ত করতে অর্পিতা এবং বিপ্লববাবু দু’জনই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মাইক হাতে অর্পিতা বলেন, “ভোটে জেতার পরেও জেলায় থাকব।”
পরে সাংবাদিকদের অর্পিতা বলেন, “ভোটে জিতলে পাঁচ দিন বালুরঘাটে এবং দু’দিন কলকাতায় থাকব।” দলের সমর্থকের প্রশ্ন সম্পর্কে তৃণমূলের কুমারগঞ্জ ব্লক সভাপতি আমজাদ আলি বলেন, “একজন উত্সাহী সমর্থক আবেগের বশে ওই কথা বলে ফেলেছেন। সভার কাজ সুষ্ঠুভাবেই হয়েছে।” জেলা সভাপতি বিপ্লববাবুও বলেন, “এটা এমন কোনও ঘটনাই নয়। কোনও গুরুত্ব দিচ্ছি না। দলে কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ নেই।”