জগদ্ধাত্রী ঠাকুর দেখতে চন্দননগরে সাধারণ মানুষের ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।
দীপাবলি মিটতে না মিটতেই জগদ্ধাত্রী পুজো। আর এই পুজো মানেই চন্দননগর এবং আলোর রোশনাই। গলি থেকে রাজপথ— সেজে উঠেছে নানা আলোয়। চন্দননগরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন বারোয়ারির মণ্ডপ। এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়! বিভিন্ন থিম এবং তার সঙ্গে আলোর খেলা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে লোক আসছেন চন্দননগরে। সপ্তমীতে বিকেল গড়াতেই চন্দননগরে নেমেছে জনতার ঢল।
পালপাড়া না বিদ্যালঙ্কার, হেলাপুকুর না কি বাগবাজার— সপ্তমীর সন্ধ্যায় কে কাকে ভিড়ে টেক্কা দিল তা নিয়ে আলোচনা চলতেই পারে। কলকাতা বা অন্য জায়গায় জগদ্ধাত্রী পুজো রবিবার (নবমী) হলেও চন্দননগরে ষষ্ঠী অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকেই উৎসব শুরু হয়েছে। মণ্ডপে মণ্ডপে সাধারণ মানুষের ভিড়। শুক্রবার, সপ্তমীতে সেই ভিড় বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে। অনেকের মতে, আগামী দু’দিন চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপগুলিতে যে জনপ্লাবন হতে চলেছে তার আভাস মিলেছে শুক্রবারই।
শ্রীরামপুর থেকে পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে ঠাকুর দেখতে এসেছিলেন সৌমী আর্য। চন্দননগরের বাছাই করা কয়েকটি মণ্ডপ পরিদর্শন করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। প্রথমেই পালপাড়ার মণ্ডপে যান। কিন্তু বিকেল থেকেই মণ্ডপের বাইরে বিরাট লাইন। সেই লাইন ঠেলে মণ্ডপে ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাঁকে। তবে প্রতিমা দর্শন করে এবং আলোর সাজ দেখে অভিভূত তিনি। বললেন, ‘‘আরও কয়েকটা ঠাকুর দেখব। তার পর রাতের ট্রেনে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরব।’’
বর্ধমানের মেমারি থেকে চার বছরের কন্যা অনুত্তমা এবং শ্বশুর রবিলোচনকে নিয়ে চন্দননগরে এসেছেন অপৃতা ঠাকুর। রবিলোচন প্রাক্তন শিক্ষক। বয়স আশি ছুঁইছুঁই। লাঠি হাতে হাঁটেন। কিন্তু এত বছরেও চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো দেখা হয়নি তাঁর। বৌমা এবং নাতনির উৎসাহেই লাঠি হাতে মেমারি থেকে চলে এসেছেন এ বছর। হেঁটেই একের পর এক মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন রবি।
চন্দননগর স্টেশন থেকে নেমে স্টেশন রোড ধরে এগিয়ে গেলেই পর পর পুজো। প্রথমে খলিসানি, তার পর ফটকগোড়া, মধ্যাঞ্চল, বাগবাজার চৌমাথা। তার আগে বাঁ দিকে তালপুকুর, বিদ্যালঙ্কার। ডান দিকে বাগবাজার। পালপাড়ার পুজো ছাড়াও এই পুজোগুলি নিয়েও উৎসাহ রয়েছে সাধারণ মানুষের। বরাবরই এই মণ্ডপে ভিড় হয়। রাত যত বাড়ছে ভিড় ততই বাড়ছে মণ্ডপে মণ্ডপে। এ ছাড়াও সপ্তমীতে উপচে পড়া ভিড় হয়েছে মানকুন্ডু স্টেশন রোডে। স্পোর্টিং, নতুনপাড়া, নিয়োগী বাগান, সার্কাস মাঠ, স্টেশন রোড ধরে হাঁটলেই পর পর মণ্ডপ।
শুক্রবার চন্দননগরের বিভিন্ন মণ্ডপে জনসমাগম। —নিজস্ব চিত্র।
তবে এত আলোর মধ্যেও এ বার চন্দননগরের মধ্যাঞ্চল বারোয়ারিতে নেমেছে ‘অন্ধকার’। বারোয়ারির সদস্যদের দাবি, তাঁরা মণ্ডপ চত্বরে একটি জলাশয়ের উপর ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’-এর আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তা বন্ধ করে দেয়। তারই প্রতিবাদে মণ্ডপের সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। চন্দননগরে এর আগেও অনেক ধরনের প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে। তবে জগদ্ধাত্রী পুজোয় এ ভাবে আলো নিভিয়ে প্রতিবাদ এই প্রথম। বারোয়ারির সদস্যদের দাবি যত ক্ষণ না ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ চালানোর অনুমতি মিলবে তত ক্ষণ পুজোর কোনও আলোই জ্বলবে না।
পুলিশের বক্তব্য, ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ বন্ধ করার অনুরোধ করা হয়েছে। কারণ চন্দননগর স্টেশন রোডে প্রচুর লোকের সমাগম হয়। গত বছর ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ শোয়ের জন্য চন্দননগর রেল স্টেশন এবং আশপাশের এলাকায় প্রচুর লোক হয়ে যাওয়ায় পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।