গরু পাচারকারী এবং বিএসএফের সংঘর্ষের সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে সন্দেহভাজন এক পাচারকারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোরে হিলি সীমান্তের মথুরাপুর বিএসএফ ফাঁড়ির অধীন জামালপুরের পাহানপাড়া এলাকার ঘটনা। পাচারকারীদের হামলায় তিন বিএসএফ জওয়ান জখম হয়েছেন। বালুরঘাট হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা করানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম মহম্মদ জনি বাবু (২২)। বাড়ি বাংলাদেশের জয়পুরহাটে। এ দিন বালুরঘাট হাসপাতালে মৃতের ময়নাতদন্ত করে দেহটি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে এদিন মথুরাপুর সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বিএসএফ(সীমান্তরক্ষী বাহিনী) এবং বিজিবি-র(বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) পদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে ফ্ল্যাগ মিটিঙ হয়। বিএসএফের তরফে কমান্ডিং অফিসার আর মুত্থু কৃষ্ণন এবং বিজিবির পক্ষ থেকে এরিয়া কমান্ডার আব্দুল রেজ্জাক তরফদার উপস্থিত ছিলেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ওই বৈঠকে দুপক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগে সোচ্চার ছিল বলে জানা গিয়েছে।
বিজিবির প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে পাচারকারীরা ওপার থেকে এপারে ঢুকে গরু পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। বাধা দিতে গেলে বিএসএফ জওয়ানদের উপরে পাচারকারীরা চড়াও হয়ে সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে বলে ওই ফ্ল্যাগ মিটিঙে বিএসএফের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। বিজিবির এরিয়া কমান্ডার আব্দুল রেজ্জাক তরফদার অভিযোগ অস্বীকার করে প্রাণহানির ঘটনায় আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, গরু পাচার রোধে প্রাণঘাতী গুলি না চালিয়ে অন্য ভাবে মোকাবিলার উপর বিএসএফকে জোর দিতে বলেছেন। তার অভিযোগ, গত ছ’মাসে এই এলাকায় বিএসএফের গুলিতে দু’জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। জখম একাধিক পাচারকারীদের সশস্ত্র হামলায় ওই এলাকায় ছ’জন জওয়ান গুরুতর জখম হয়েছেন বলে বিএসএফের তরফে পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে।
এ দিন এক সাংবাদিক সম্মেলন করে বিএসএফের সংশ্লিষ্ট কমান্ডিং অফিসার আর মুত্থু কৃষ্ণন বলেন, এলাকাটি কাঁটাতার বিহীন হওয়ায় জওয়ানেরা সব সময় প্রাহারায় থাকে। কিন্তু দিনদুপুরে জামালপুর এলাকা দিয়ে ওপার বাংলাদেশ থেকে পাচারকারীরা এ পারের গ্রামে ঢুকে পড়ছে কী করে, তা বিজিবি কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, এপারের পাচারকারীদের মদত রয়েছে। গরুগুলি এক জায়গায় জড়ো করার পর ওপার থেকে দলবেঁধে এসে পাচারকারীরা গরু পাচার করছে।
কমান্ডিং অফিসার জানান, সোমবার ভোরে পাহানপাড়া এলাকা দিয়ে ৫০-৬০ জনের এক পাচারকারী এপার থেকে ১০০-র উপরে গরু নিয়ে জমির আলপথ ধরে ওপারে পাচার করছিল। টহলরত তিন জওয়ান বাধা দিতে গেলে দলটি জওয়ানদের ঘিরে ধরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। পঞ্চাক স্ট্যাংজিন নামে এক জওয়ানের হাতে কোপ মারা হয়। অপর দুই জওয়ান বংশীলাল বিষ্ণুই ও ব্রজেন্দ্র গিরিকে মারধোর করে রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। সেই সময় এক জওয়ান গুলি চালালে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে বিএসএফ ৩১টি গরু আটক করেছে।