গাড়ি চালানো অভ্যেস করতে গিয়ে ৩ ছাত্রীকে ধাক্কা মেরে জখম করার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ মালবাজারের একটি ইংরেজি মাধ্যমের বেসরকারি স্কুলে ঘটনাটি ঘটেছে। জখমরা সকলেই দ্বাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের ছাত্রী। তাঁদের প্রথমে মালবাজার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে একজনকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দেন। অন্য দুজনকে শিলিগুড়ির বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। তাঁদের মাথার সিটি স্ক্যান করানো হয়েছে। তাঁরা কিছুটা সুস্থ বলে দাবি বাড়ির লোকজনদের।
তবে ওই ঘটনার পরে দু’দিন কাটলেও এখনও স্কুলের তরফে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের না করায় অভিভাবক মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা স্কুল কর্তৃপক্ষের ভূমিকার সমালোচনায় সরব হয়েছেন। তা নিয়ে জনমত গড়তো সোশ্যাল সাইটে জোট বাঁধছেন তাঁরা।
স্কুলের অধ্যক্ষ দিলীপ সরকার বলেন, “যে শিক্ষক গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তাঁর নাম বিমলেন্দু নাথ ভৌমিক। অনেকে বলছেন, উনি গাড়ি চালানো শিখছেন। এই অভিযোগ সত্যি নয়। উনি গাড়ি চালাতে জানেন। ওঁর লাইসেন্সও রয়েছে। দুর্ঘটনায় জখম ছাত্রীদের যাবতীয় চিকিৎসার খরচ স্কুলের তরফ থেকেই বহন করা হচ্ছে। কেউ সমালোচনা করছে বলে জানা নেই। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমার কাছে কোনও অভিযোগই জমা পড়ে নি। শুনেছি মালবাজার থানাতেও অভিযোগ কেউ দেননি।” কিন্তু, স্কুলে দুর্ঘটনার পরেও তা কেন তিনি পুলিশকে জানালেন না? অধ্যক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মালবাজারের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নিমা ভুটিয়া বলেন, “স্কুলের দুর্ঘটনা নিয়ে কোন অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে পুরো বিষয়টি দেখা হবে।”
স্কুল সূত্রের খবর, রোজ স্কুল শুরু হয় ৯টায়। কিন্তু, সামসিং এ একদিনের বেড়ানোর কর্মসূচি ছিল ওই কলা বিভাগের ছাত্রীদের। সে জন্য স্কুল খোলার অনেক আগে থেকেই কলা বিভাগের পড়ুয়ারা চলে এসেছিল। যে শিক্ষক গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটান বলে অভিযোগ, সেই বিমলেন্দু নাথ ভৌমিকও স্কুলে চলে আসেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক শিলিগুড়ির আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা বিমলেন্দুবাবু গাড়ির চালক সমীর গোপের থেকে চাবি চেয়ে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেন। কিন্তু সমীরবাবু জানান, গাড়িটি গিয়ারে থাকায় সেটি বুঝতে না পেরেই বিমলেন্দুবাবু গতি বাড়িয়ে দেওয়ায় দুর্ঘটনাটি ঘটে যায়।
দুর্ঘটনার পর জখম তিন ছাত্রীকে মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাদের মধ্যে অপরূপা সাহাকে প্রাথমিক চিকিৎসা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্য দুই ছাত্রী সায়নী দে এবং দেবাঙ্কিতা দাসের মাথায় আঘাত লাগায় তাদের সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর পর শিলিগুড়ির মাটিগাড়া লাগোয়া একটি নার্সিংহোম থেকে দুই ছাত্রীকে যাবতীয় পরীক্ষা করা হয়। তবে চোট গুরুতর না হওয়ায় দুইছাত্রীকেই অবশ্য ছেড়েও দেওয়া হয়।
কিন্তু এই ঘটনার জেরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে মালবাজার শহর জুড়ে। ক্ষুব্ধ স্কুলের অভিভাবক ও পড়ুয়াদের একাংশ। পুরো ঘটনা জানিয়ে ফেসবুকেও শিক্ষকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার অভিযোগ তুলে সমালোচনায় সরব হয়েছেন তাঁরা। স্কুলের তরফেই জানা গিয়েছে, দূর্ঘটনায় জড়িত ছোট গাড়িটি স্কুলের কাজেই ব্যবহার করা হয়। তার নির্দিষ্ট চালকও রয়েছে। এ দিন শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্যে বাজার থেকে মাংস কিনতে গাড়িটিকে বাজারে যেতে বলা হয়েছিল। সে সময় বিমলেন্দু বাবু কেন গাড়িতে চালকের আসনে স্টার্ট দিতে গেলেন তা পরিষ্কার নয়। স্কুলের আরেকটি সূত্র থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বিমলেন্দুবাবু স্কুলের গাড়িটি নিয়ে রোজই চালানো শিখতেন। পড়ুয়ারা যেখানে রয়েছে সেখানে এতবড় ঝুঁকি নেওয়া উচিত হয়নি বলেই অভিভাবকদের ক্ষোভ।
জখম দেবাঙ্কিতা দাসের বাবা গৌতম দাস বলেন “পুরো ঘটনাটাই অনিচ্ছাকৃত ভাবেই হয়েছে। স্কুলের তরফেও চিকিৎসার ব্যাপারে সাহায্য পেয়েছি। তাই আমাদের তরফে কোনও অভিযোগ নেই।” তবে জখম পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা না হলেও অন্য অভিভাবকেরা পুরো ঘটনায় যথেষ্টই ক্ষুব্ধ। এক অভিভাবকের কথায়, “স্কুলের পরীক্ষায় নম্বর কম পাওয়ার ভয়েই অন্যেরা মুখ খুলছেন না। কিন্তু স্কুলে এ ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা উচিত নয়। অধ্যক্ষ পুলিশের অভিযোগ না করলে ছাত্রছাত্রীরাও অন্যায় করে রেহাই পেতে চাইতে পারে।” যাঁর বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ, অভিযোগ, সেই বিমলেন্দুবাবুর মোবাইল ফোন কখনও বেজে গিয়েছে। কখনও তা বন্ধ বলে অন্য প্রান্ত থেকে ঘোষণা হয়েছে।