জেলা পরিষদের বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের পূর্ত ও পরিবহণ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণ করা হল হরিরামপুরের বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শুভাশিস ওরফে সোনা পালকে। শুক্রবার বালুরঘাটে জেলাপরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে সোনা পালের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়। তবে সভায় দলের তিন বিধায়কের অনুপস্থিতি নিয়ে গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। সভায় আসেননি দলের তপনের বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা, গঙ্গারামপুরের বিধায়ক সত্যেন রায় এবং কুমারগঞ্জের বিধায়ক মাহমুদা বেগম। তৃণমূলের ওই তিন বিধায়ক দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের বিরুদ্ধে একক সিদ্ধান্তের অভিযোগ তুলে সরবও হয়েছেন।
গত ৩ ডিসেম্বর দলবিরোধী কাজের অভিযোগে সোনাবাবুকে ছয় বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করেন দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। তাঁকে জেলাপরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে অপসারণে প্রক্রিয়াও শুরু হয়। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, গত ২৩ ডিসেম্বর বিভাগীয় কমিশনারের কাছে সোনা পালের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ হয়। এদিন ছিল তলবি সভা। জেলা পরিষদের ১৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের ১৩টি এবং সিপিএমের ৪ জন সদস্য ছাড়াও জেলার ৬ জন বিধায়ক, একজন সাংসদ এবং ৮টি পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতিকে নিয়ে ৩১ জনের ভোটাধিকার রয়েছে।
এদিনের সভায় সোনা পাল উপস্থিত ছিলেন না। বিরোধী সিপিএমের সদস্য এবং একজন আরএসপির বিধায়ক (কুশমন্ডি) গড়হাজির ছিলেন। এদিন তৃণমূলের ১১ জন জেলাপরিষদ সদস্য, আট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং সাংসদ অর্পিতা ঘোষ এবং বিধায়ক বিপ্লব মিত্র-সহ মোট ২১ জন সদস্য ছিলেন। বিপক্ষে কেউ না থাকায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যায়। দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র জানান, নবান্নতে মিটিং থাকায় সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা ছিলেন না। আর কাজে ব্যস্ততার কারণে দলের বিধায়কেরা সভায় উপস্থিত ছিলেন না। সকলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এদিনই জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিন বিধায়ক। তপনের বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা বলেন, “একক সিদ্ধান্তে সোনা পালের বহিস্কার, অপসারণ হচ্ছে। আমরা ঠিকঠাক কিছুই জানি না।” তাঁর অভিযোগ, “দলে সোনা পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়নি। সভার চিঠি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাই। দলে যখন আলোচনা হল না তখন ওই বৈঠকে কেন যাব।”
একই অভিযোগ করেছেন গঙ্গারামপুরের বিধায়ক সত্যেন রায়ও। তাঁর অভিযোগ, “বৃহস্পতিবার রাতে সভার চিঠি পাই। আগের ঘটনাই কিছু জানি না। তাহলে এখন গিয়ে কী হবে। জেলা সভাপতি একক সিদ্ধান্তে দল চালাচ্ছেন।” আবার কুমারগঞ্জের বিধায়ক মাহমুদা বেগম বলেন, “সকলে মিলে খেটে দলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে জেলাপরিষদ দখল করলাম। আর কর্মাধ্যক্ষ বাছাই করার সময় আমাদের কথা জেলা সভাপতি শুনলেনই না। এখন তাহলে কাউকে অপসারণের প্রক্রিয়ায় কেন যাব।” তিন বিধায়কই সব ঘটনা রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
দলীয় সূত্রের খবর, জেলার ৫ জনের দলের বিধায়কের মধ্যে ৪ জনই জেলা সভাপতি বিপ্লববাবুর বিরুদ্ধে গোষ্ঠীর বলে পরিচিত। এরমধ্যে পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীও আছেন। বিপ্লববাবুও বিধায়ক। বিধায়কদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিপ্লববাবু। তিনি বলেছেন, “সমস্ত সিদ্ধান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায়ের নির্দেশ পেয়ে কার্যকরী করা হয়েছে। বিধায়কদের যে সব জানতে চাইছেন, তাহলে সেগুলি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে জানতে চান।” তিনি জানান, সকলকে নিয়েই দল চলছে। জেলায় সমস্ত কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কোর কমিটিতে বিধায়কেরা নেই। রাজ্য নেতৃত্ব সব জানেন।
এদিন সোনা পালও বলেছেন, “আমি যা বলেছি, বিধায়কেরা এখন তাই বলছেন। এখন জেলা সভাপতির বিধায়কদেরও বহিস্কার করা উচিত।”