সাংবাদিক বৈঠকে অরবিন্দ ঘোষ।
পাঁচ বছর আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন শিলিগুড়ি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ (অমু)। দলে থাকার সুবাদে ধীরে ধীরে জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। দলের অন্দরে গৌতমবাবুর ছায়াসঙ্গী হিসেবেও পরিচিত হয়ে যান। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে অরবিন্দবাবু তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তাঁর দাবি, “তৃণমূলে এখন যা চলছে তাতে রাতে ঘুমোতে পারছি না। মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি না। চোখের সামনে দেখছি, কিছু ব্যবসায়ী এবং দলের নেতাদের একাংশ মিলে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকায় জমির ব্যবসা করছেন। যে জমি গরিবদের পাওয়ার কথা সেই বিঘের পর বিঘে জমি একটা চক্রের দখলে যাচ্ছে। এটা সহ্য করতে পারছি না। এ হেন অসহ্য পরিস্থিতির হাত থেকে মুক্তি চাই। তাই দল ও সরকারি সব পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। সে কথা জানিয়ে দিয়েছি।”
অরবিন্দ তৃণমূলের জেলার কোর কমিটির সদস্য। দলীয়ভাবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবে’র বিধানসভা এলাকা দেখভালে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। এ বারের উত্তরবঙ্গ উৎসবেরও তিনি কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। দীনবন্ধু মঞ্চ পরিচালন কমিটি, আইসিডিএস টেন্ডার কমিটির সদস্য ছিলেন। দলের পুর কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতিও তিনি ছিলেন। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “উনি একটি চিঠি দিয়েছেন। দলীয় স্তরে বিষয়টি দেখছি। এর বেশি কিছু বলছি না।”
দলের জেলা সভাপতির অন্যতম ঘনিষ্ঠ নেতা অরবিন্দবাবুর ইস্তফা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। দলের এক পক্ষ মনে করছেন, ছক কষেই অরবিন্দবাবু ইস্তফা দিয়ে দলের প্রদেশ নেতাদের উপরে চাপ বাড়াতে চান। তৃণমূলের ওই অংশের নেতাদের অভিযোগ, সম্প্রতি প্রদেশ নেতৃত্ব জেলা কমিটিতে নান্টু পাল, ভাইচুং ভুটিয়াকেও কার্যকরী সভাপতি পদে বসালে অরবিন্দবাবুকে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। অন্য অংশের সন্দেহ, অরবিন্দবাবু এত দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া এক পা হাঁটেননি। তা হলে এখন কেন ‘একলা চলতে’ চাইবেন? তাঁদের কয়েক জনের মতে, সে ক্ষেত্রে বিজেপি পরিস্থিতির সুযোগ নিতে তৎপর হতে পারে। সেই প্রেক্ষাপটে অরবিন্দবাবুকে বুঝিয়ে ইস্তফা তুলিয়ে দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার সম্ভাবনাও তৃণমূলের অনেকে দেখছেন। এক নেতার কথায়, “যদি অরবিন্দবাবুকে ইস্তফা থেকে নিরস্ত করা যায় তা হলে ভালই হবে। সে ক্ষেত্রে উনি আরও বড় পদে যেতে পারেন। তাতে দলের জেলা সভাপতি সহ সকলেই খুশি হবেন।”
যদিও অরবিন্দবাবু জানান, তিনি ক্ষমতা লোভী নন। তিনি বলেন, “তাই দল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দুটি পদ দীনবন্ধু মঞ্চ পরিচালন কমিটি এবং আইসিডিএস টেন্ডার কমিটি সদস্যপদও ছেড়েছি। পুর কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতির পদও ছাড়লাম।” তাঁর অভিযোগ, “দলের একাংশ এখন সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে। ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি এলাকায় সরকরি জমি গরিব মানুষকে না দিয়ে ব্যবসায়ী ও নেতাদের একতাংশ কব্জা করছেন। যাঁদের এ সব দেখার কথা তাঁরা চুপচাপ বসে।”
ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভার দেখভালের দায়িত্বে থাকায় সরকারি খাস জমি দখল নিয়ে অরবিন্দবাবু সরব হন। যা নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিছু সরকারি প্রকল্পের কাজ হাতে গোনা কয়েকজন ঠিকাদার পাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ তোলেন। যা নিয়েও কার্যকর পদক্ষেপ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, জেলার একজন যুব নেতা প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পেয়েও বিধি ভেঙে ছুটিতে চলে যান। যা নিয়ে সরব হন অরবিন্দবাবু। লোকসভা ভোটে অরবিন্দবাবুকে পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত উপনির্বাচনে ওয়ার্ডটি তৃণমূল কংগ্রেস হাতছাড়া করে। লোকসভা ভোটে ফের তৃণমূল ওয়ার্ডে লিড পায়। এই নিয়ে দলীয় বৈঠকে কথা উঠলে দলের শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে অরবিন্দবাবুকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ।