অশোক ভট্টাচার্য।—ফাইল চিত্র।
পুরভোটে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যকে শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র পদপ্রার্থী করে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। দলের অন্দরের খবর, প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাম-ব্যাক’-এর দরাজ প্রশংসা করা অশোকবাবুর কাছেও আসন্ন পুরভোটই হতে চলেছে ‘কাম-ব্যাক’-এর ‘পিচ’। মঙ্গলবার দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের বৈঠক শেষে সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “কর্মী-সমর্থকেরা অশোকবাবুকে প্রার্থী হিসেবে চাইছিলেন। এ ব্যাপারে রাজ্য কমিটির অনুমতি মিলেছে।”
ভোটের আগে কাউকে কোনও পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার পথে সচরাচর হাঁটে না সিপিএম। কিন্তু সরকারি ভাবে না হলেও, অশোকবাবুই যে পুরভোটে দলের ‘ক্যাপ্টেন’ সে ইঙ্গিত দিয়েছেন জীবেশবাবু।
উপ-নির্বাচন, পঞ্চায়েত বা লোকসভা ভোটরাজ্যে বামেদের রক্তক্ষরণ অব্যাহত। শিলিগুড়ি থেকেই বিধানসভা ভোটে হারার চার বছরের মাথায় অশোকবাবুর নেতৃত্বে দল কতটা মাটি খুঁজে পাবে, তা সময় বলবে। তবে সিপিএম সূত্রের খবর, দলের বিদায়ী রাজ্য কমিটির বৈঠকে উত্তরবঙ্গের নেতাদের একাংশ জানিয়েছিলেন, শিলিগুড়ি পুর-এলাকায় নানা কর্মকাণ্ডে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব চোখে পড়ার মতো খরচ-খরচা করছেন। তৃণমূলের হাবভাবে স্থানীয় বাম নেতাদের মনে হচ্ছে, মন্ত্রীই এ বার শিলিগুড়িতে তৃণমূলের মেয়র পদপ্রার্থী হতে পারেন। সেই সূত্র ধরেই অশোকবাবুর মতো ‘ওজনদার’ কারও হাতে দলের ব্যাটন থাকলে, মাটি কামড়ে লড়াই দেওয়া সম্ভব হবে বলে রাজ্য কমিটিকে জানিয়ে রেখেছিলেন জীবেশবাবুরা। তবে ২০১০ সালে শিলিগুড়িতে বাম-পরিচালিত পুর-বোর্ডের মেয়র তথা তুলনায় তরুণ প্রজন্মের নেতা নুরুল ইসলামের পরে অন্য গ্রহণযোগ্যমুখ উঠে না আসায় ঘনিষ্ঠ মহলে বামেদের একাংশ অস্বস্তি লুকোননি।
১৯৮৮ সালে শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ভোটে জিতে তৎকালীন পুরপ্রধান হন অশোকবাবু। তার তিন বছরের মধ্যেই বিধানসভা ভোটে জিতে মন্ত্রী হওয়ায় পুরপ্রধান এবং কাউন্সিলর পদ থেকে ইস্তফা দেন। তার পরে ১৯৯১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত পুরমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।
তবে যেখান থেকে শুরু, ফের সেই ‘মাঠ’ থেকেই নতুন ‘ইনিংস’ খাড়া করা যে সহজ নয়, তা মানছেন অশোকবাবু। তাঁর বক্তব্য, “কংগ্রেস-তৃণমূল পুর-বোর্ড চালানোর দায়িত্ব পেয়ে যা করেছে, তাতে শিলিগুড়ি শহরবাসী বীতশ্রদ্ধ। শিলিগুড়িকে ফের স্বমহিমায় ফেরাতে আমরা বদ্ধপরিকর।”
তবে পুর-বোর্ড বামেদের দখলে না এলে প্রাক্তন মন্ত্রীর রাজনৈতিক ভবিষ্যত কী হবে, দলে তা নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁর রাজনৈতিক ইনিংস শেষ হয়ে অবসরের প্রসঙ্গ উঠে যেতে পারে বলে আশঙ্কা শিলিগুড়ির প্রবীণ বাম নেতাদের একাংশের।
অশোকবাবুকে নিয়ে বামেদের এই ভোট-কৌশলে আপাত-নিরুত্তাপ দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতম দেব। বলেছেন, “কোন রাজনৈতিক দল, কাকে প্রার্থী করবে তা নিয়ে মন্তব্য করব না।” বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসুর কটাক্ষ, “শিলিগুড়ি শহরের যাবতীয় সমস্যার জন্য বামেরা তথা অশোকবাবু দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। আবার সেই অশোকবাবুকেই মেয়র হিসেবে তুলে ধরতে হচ্ছে, বামেদের দশা এতে স্পষ্ট!”