আহত সিপিএম সমর্থক সতীশ লস্কর কোচবিহার হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে লোকসভা ভোটের প্রথম পর্বেই সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সরব হল বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দিনভর কোচবিহারে এমনই নানা অভিযোগ উঠেছে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের তরফে অবশ্য সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “সব অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিকারপুর এলাকায় ইতিমধ্যে দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।”
বিরোধীদের অভিযোগ, বেশির ভাগ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকার সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাস চালায় তৃণমূল। জেলার কোচবিহার দক্ষিণ, নাটাবাড়ি ও শীতলখুচি বিধানসভা এলাকায় ওই প্রবণতা ছিল সবচেয়ে বেশি। আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের আওতাধীন কোচবিহারের তুফানগঞ্জের একটি বুথেও বাম পোলিং এজেন্টকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বামেদের অভিযোগ, এদিন সকালে তুফানগঞ্জ পুরসভার মিউনিসিপ্যাল ১ নম্বর প্রাইমারি স্কুলে বাম প্রার্থীর এজেন্ট নৃপেন পালকে বুথের ভিতরই বেধড়ক পেটানো হয়। জখম নৃপেনবাবুকে তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এ ছাড়াও অন্দরানফুলবাড়ি এলাকার একটি বুথেও বাম প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে জবরদস্তি বার করে দেওয়া হয়। কোচবিহার কেন্দ্রের আওতাধীন মাথাভাঙার ১১৫ নম্বর বুথে বাম প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট অমল বর্মনকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। অমলবাবুকে মাথাভাঙা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। শিকারপুর বাম প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট গজেন অধিকারীকে মারধর করে বুথ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে।
বামেরা জানিয়েছেন, কুর্শামারি, নগর গোপালগঞ্জ, নলঙ্গিবাড়ির বিভিন্ন বুথেও বাম প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের তৃণমূল বুথ থেকে তাড়িয়ে দেয়। শিকারপুরে সতীশ লস্কর নামে এক সিপিএম সমর্থককে লাঠিপেটা করা হয়। কোচবিহার জেলা হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। দিনহাটার বাসন্তীরহাটের ৫২ নম্বর বুথ, নয়ারহাটে তিকলিঝোড়া এলাকার ১৫৫ নম্বর ও শুকারুরকুঠির ১৯৮ নম্বর বুথে ফরওয়ার্ড ব্লকের পোলিং এজেন্টকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। নাটাবাড়ি বিধানসভার দেওচড়াইয়ে ভোট দিয়ে বার হওয়ার সময় সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তমসের আলির গাড়ি আটকে হেনস্থার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। শীতলখুচিতে তৃণমূলের ছাপ্পা ভোট দেওয়ার প্রতিবাদ করায় তিন বাম কর্মী-সমর্থককে পেটান তৃণমূল সমর্থকরা।
কোচবিহার কেন্দ্রে বামফ্রন্টের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দীপক রায় বলেন, “নাটাবাড়ি, শীতলখুচি ও কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভার অন্তত ৯০টি বুথ দখল করে ভোট করিয়েছে তৃণমূল। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় বাম এজেন্টদের মারধর, বুথ থেকে বার করে দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়ে ১৫ মিনিট ধর্ণায় বসে প্রতিবাদ জানিয়েছি। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে অনশন করব।” সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় বলেন, “জেলা জুড়েই হাড়হিম করা সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূল। দুপুর পর্যন্ত যা হিসেব তাতে ৫০টির বেশি বুথে পুলিশের সামনে আমাদের পোলিং এজেন্টকে মারধর, হুমকি, বার করে দেওয়ার ঘটনা হয়েছে।”
সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেসও। দলের অভিযোগ, কোচবিহারের শতাধিক বুথে তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে পোলিং এজেন্ট দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ দিন শীতলখুচির লালবাজার, গোলেনাওহাঁটি, ছোটশালবাড়ি, নাটাবাড়ির মারুগঞ্জ, চিলাখানা ১ ও ২ এবং কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের সুটকাবাড়ি, ঘুঘুমারি, চিলকিরহাট এলাকায় ওই সন্ত্রাস চরম পৌঁছয়। কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “ভয় দেখানো, মারধর, হুমকি কিছু বাদ রাখা হয়নি। তৃণমূলের সন্ত্রাসে জেলার শতাধিক বুথে পোলিং এজেন্ট দেওয়া যায়নি।”
বিজেপির অভিযোগ, কোচবিহারের ১৯৮৬টি বুথের মধ্যে তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে তারা ৭০০-র বেশি বুথে পোলিং এজেন্ট দেওয়া সম্ভব হয়নি। নাটাবাড়ি বিধানসভার মারুগঞ্জের আমলাগুড়িতে বিজেপির নির্বাচনী বুথ অফিস ভেঙে দেওয়া হয়। ঝিনাইডাঙায় দলের পোলিং এজেন্টকে হুমকি দেওয়া হয়। বিজেপি’র কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিল দে বলেন, “তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্য ১২০০’র বেশি বুথে পোলিং এজেন্ট দেওয়া যায়নি। এলাকায় ভোটারদের রাস্তায় আটকানো হয়।”
গোটা অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মানুষ উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন। নিশ্চিত পরাজয় বুঝেই বিরোধীরা অপপ্রচার করছেন।”