ওটিতে বহিরাগত যুবক ঢোকা এবং সরঞ্জাম সরবরাহ করার ক্ষেত্রে রোগিণীর পরিবারের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তাতে চিকিৎসক জড়িত, তদন্ত রিপোর্টে তা জানানোর পরেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ তুলে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব হল বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাঁরা এর প্রতিবাদে হাসপাতাল সুপারের দফতরে অবস্থান আন্দোলন করবেন বলে জানিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তথা সুপারের ভূমিকা নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে জ্যোতির্ময় পাল বলেন, “সুপারের বক্তব্যে আমরা হতাশ। হাসপাতাল চত্বরে দালাল চক্রকে কার্যত কর্তৃপক্ষই মদত দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। চিকিৎসক ঘটনায় জড়িত রিপোর্টে তা জানানো সত্ত্বেও তিনি কেন ব্যবস্থা নেবেন না? এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব।”
হাসপাতাল সুপার অমরেন্দ্র সরকার বলেন, “তদন্ত রিপোর্টে যা জানানো হয়েছে সে কথা বলে দেওয়া হয়েছে। সরঞ্জাম সরবরাহকারীকে রোগীর দরকারে ওটিতে ঢুকতে হয়। তবে এর জন্য অনুমতি নিতে বলা হয়েছে। সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রেও রোগিণীর লোকদের সাহায্য করতে চিকিৎসকরা সরবরাহকারীদের ফোন নম্বর দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে একাধিক সংস্থার নম্বর দিতে বলা হয়েছে। যাতে রোগীর বাড়ির লোকরা পছন্দের জায়গা থেকে তা কিনতে পারেন। দামের বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের দেখতে বলা হয়েছে।” তা হলে এত দিন কেন সেই ব্যবস্থা ছিল না? হাসপাতাল সুপার এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, “অনিয়মটাই নিয়ম হয়েছিল। সকলে তা স্বাভাবিক বলে জানতেন।” এই মন্তব্য ঘিরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। মাত্র দু’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল -এর চিকিৎকদের একাংশের কাজকর্ম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁদের একাংশ জেনেরিক নামে ওষুধ না লেখায় হাসপাতাল চত্বরে থাকা ন্যায্য মূল্যের দোকানে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ। বেশি দামে সরঞ্জাম সরবরাহের অভিযোগের পর এখন হাসপাতাল চত্বরে থাকা ন্যায্য মূল্যের দোকানেও সেই সমস্ত দামি সরঞ্জাম সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গত ১৪ মে হাসপাতালে ভর্তি কদমতলার বাসিন্দা ভারতী দাসের কোমরে অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম সরবরাহ করে নির্মল মণ্ডল নামে এক যুবক। ৫ হাজার টাকা দামের ওই সরঞ্জামের জন্য তিনি রোগিণীর লোকদের কাছ থেকে ১৭ হাজার টাকা নেন বলে অভিযোগ। তাঁর নামে প্রতারণার মামলা করা হয়। অভিযোগ, সরঞ্জাম কিনতে অভিযুক্ত চিকিৎসক শুভাশিসরঞ্জন মিত্র ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশেই রোগিণীর লোকেরা ওই ব্যক্তির থেকে সরঞ্জাম নিয়েছিলেন। অথচ দাম বেশি নেওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। ওটিতে তাঁর সহকারী হিসাবে ওই ব্যক্তিকে দেখতে পান রোগিণীর পরিবারের লোকেরা। এর পর নির্মল মণ্ডলকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
হাসপাতাল সুপার অমরেন্দ্র সরকার তদন্ত কমিটি করে ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দেন। সেই মতো রিপোর্ট এলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন। ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট তৈরি না হওয়ায় অন্তত পাঁচটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা গিয়ে সুপারের দফতরে বিক্ষোভ দেখান। অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। অথচ তদন্ত রিপোর্টে অন্যায় ঘটনার সঙ্গে এক চিকিৎসকের যুক্ত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করার পরে সুপার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না চাওয়ায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সংস্থাগুলি।