একই জমিতে হবে ধান ও মাছ চাষ। নিজস্ব চিত্র।
একই জমিতে ধান ও মাছ চাষ শুরু করেছেন উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ ব্লকের বাঙালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের দধিকোটবাড়ি এলাকার তিনজন চাষি। গত তিনমাস ধরে তাঁরা একই জমিতে আমন ধানের পাশাপাশি মাছের চাষ করছেন। মূলত কৃষি দফতরের পরামশেই পরীক্ষামূলকভাবে ওই চাষ করছেন তাঁরা।
চাষিদের দাবি, ধান উঠতে এখনও প্রায় দু’মাস বাকি। কিন্তু গত এক মাসে মাছ বিক্রি করেই তাঁদের চাষের খরচ উঠে গিয়েছে। কৃষি দফতরের দাবি, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী নভেম্বর মাসে ধান ওঠার পর ধান ও মাছ বিক্রি করে চাষিরা বিঘা প্রতি জমিতে প্রায় ১৯ হাজার টাকা লাভ করবেন। এতদিন শুধু ধান চাষ করে বিঘা প্রতি জমিতে তাঁরা লাভ করতেন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা। কৃষি দফতরের পরামর্শে যে তিনজন চাষি বেশি লাভের আশায় একই জমিতে ধান ও মাছ চাষে নেমেছেন, তাঁদের নাম আজাদ আলি, আজিদুর রহমান ও ইউনুস আলি।
হেমতাবাদ ব্লক কৃষি অধিকর্তা শ্রীকান্ত সিংহ বলেন, আমাদের পরামর্শে ওই তিন চাষি পরীক্ষামূলকভাবে একই জমিতে ধান ও মাছ চাষ শুরু করে ইতিমধ্যেই চাষের খরচ তুলে ফেলেছেন। তাঁরা প্রাথমিকভাবে সাফল্য পাওয়ায় প্রতিদিনই বহু চাষি চাষের পদ্ধতি জানতে কৃষি দফতরে ভিড় করছেন। তবে ধান না ওঠা পর্যন্ত নতুন করে কোনও চাষিকে ওই পদ্ধতিতে চাষ না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
আজাদ, আজিদুর ও ইউনুস বলেন, কৃষি দফতর আমাদের একই জমিতে ধান ও মাছ চাষের পরামর্শ দেওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ। গত একমাসে মাছ বিক্রি করে আমাদের চাষের খরচ উঠে গিয়েছে।
আজাদ ও আজিদুর তিন বিঘা করে ও ইউনুস এক বিঘা জমিতে গত জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ড্রামসিডার পদ্ধতিতে আমন ধানের পাশাপাশি মাছ চাষ শুরু করেছেন। ওই পদ্ধতিতে জমির তিন দিকের একাংশে প্রায় সাড়ে সাত ফুট গভীর ও সাত ফুট চওড়া জলাশয় তৈরি করে রুই, কাতল, মৃগেল, শিঙ, মাগুর ও তেলাপিয়া মাছের চারা ছেড়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, ওই পদ্ধতিতে চাষের জন্য জমিতে জলসেচ দেওয়ার দরকার হয় না। কোনও কারণে ধানগাছে পোকার আক্রমণ হলে মাছের চার পোকা খেয়ে ফেলে। মাছের মল ও মূত্র ধানগাছে সার হিসাবে কাজে লাগে। ফলে সেচ, কীটনাশক ও সারের খরচ বেঁচে যায়।
আজাদ জানান, প্রতিবিঘা জমিতে ধানচাষ করতে খরচ লাগে ১৫০০ টাকা। মাছের চারাও লাগে ১৫০০ টাকার। প্রতিবিঘা জমিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ ক্যুইন্টাল ধান উত্পাদন হয়। তিনি বলেন, বিঘাপ্রতি জমিতে এতদিন ধান বিক্রি করে আমাদের সাড়ে ছয় হাজার টাকা লাভ হত। এবার যা হিসেব দাঁড়াচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ধান ওঠা পর্যন্ত প্রতিবিঘা জমি থেকে মাছ বিক্রি বাবদ অতিরিক্ত সাড়ে ১২ হাজার টাকা লাভ হবে।
আজিদুর ও ইউনুস বলেন,“ধান ওঠার আরও দুমাস বাকি থাকলেও ইতিমধ্যেই আমরা তিনজন প্রতিবিঘা জমি থেকে গড়ে আড়াই ক্যুইন্টাল মাছ তুলে হাটে ও বাজারে বিক্রি করেছি। মাছ বিক্রি বাবদ আমাদের একেক জনের সাত হাজার টাকা আয় হয়েছে। তাতে এখনই আমাদের চাষের খরচ উঠেও অতিরিক্ত সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে লাভ হয়ে গিয়েছে।”
হেমতাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সিপিএমের সন্ধ্যা বর্মন জানান, চাষিদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে কৃষি দফতর উদ্যোগী হওয়ায় তাঁরা খুশি। হেমতাবাদ ব্লকের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ১৭ হাজার চাষি বিভিন্ন মরশুমে ধানচাষ করেন। তিনি বলেন, “আগামী মরশুমে সব চাষিকে একই জমিতে ধান ও মাছ চাষের পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কৃষি দফতরের কর্তাদের অনুরোধ করেছি।”