ঠিক কী রোগে আলু গাছ নষ্ট হচ্ছে, তা পরীক্ষা করে দেখবে কৃষি দফতর। —নিজস্ব চিত্র।
মারণ রোগে উজার হয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা আলু খেত। গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলন নেই। একই দশা টম্যাটো খেতের। ওষুধ পাল্টেও লাভ হচ্ছে না দেখে দিশেহারা ময়নাগুড়ির মাধবডাঙা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শর্মা পাড়ার অন্তত কুড়িজন কৃষকের। তাঁদের সন্দেহ, ধসা রোগেই ওই বিপর্যয় ঘনিয়েছে। যদিও কৃষি দফতরের কর্তাদের দাবি, এই সময় ধসা রোগ ছড়ানোর কথা নয়। অন্য কী রোগে ফসল নষ্ট হচ্ছে তা পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্তারা।
জেলা কৃষি আধিকারিক সুজিত পাল বলেন,“এখন কুয়াশা নেই। ধসা রোগ হওয়ার কথা নয়। অন্য কোন রোগে ফসল নষ্ট হতে পারে পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এক মাস আগে রাজগঞ্জ ব্লকের টাকিমারি চর এলাকায় ‘ফিউডোমনাস’ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে প্রায় পাঁচশো হেক্টর জমির আলু চাষ নষ্ট হয়। রোগের কারণ খতিয়ে দেখতে পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুর আলু গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা এলাকায় যান। শর্মা পাড়া গ্রামের চাষিরা জানান, দু’সপ্তাহ আগে কিছু এলাকায় রোগ দেখা দেয়। ধসা রোগ মনে করে তাঁরা ওষুধ স্প্রে শুরু করেন। কিন্তু রোগ না কমে উল্টে বেড়ে যায়। অন্তত ৬০ বিঘা জমিতে তা ছড়িয়ে পরে। বেসামাল পরিস্থিতি দেখে কৃষি কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন তাঁরা।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাগুড়ি ব্লকে এবার প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গোটা ব্লকে একমাত্র শর্মা পাড়াতেই এই রোগ ছড়িয়েছে। আলু গাছের বয়স ৭০ দিন হয়েছে। আরও ২০ দিন পরে আলু তোলার কথা। এর মধ্যেই গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। যে সমস্ত গাছ এখনও টিকে আছে সেগুলির পাতার নিচেও ছোটছোট পোকা বাসা বেঁধেছে। ক্ষতিগ্রস্থ চাষি ঋ
ষিকেশ শর্মা জানান, ওই পোকা পাতার রস শুষে নিচ্ছে। এক রাতে পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। পোকা নেই এমন গাছের গোড়াও পচে গিয়ে শুকিয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ওই চাষির ৭ বিঘা জমির আলু নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, “ওষুধ দিয়েও লাভ হচ্ছে না। ধসা রোগ কিছুতেই ঠেকাতে পারছি না।” একই দশা হয়েছে গোপাল শর্মার সাড়ে ৬ বিঘা, জয়ন্ত শর্মার ৮ বিঘা, অমল শীলের ৬ বিঘা, জগদীশ শর্মার ৪ বিঘা আলু খেতের। রূপেশ্বর রায়ের মতো যে চাষিরা জমিতে টম্যাটো চাষ করেছেন তাঁদের খেতেও মারণ রোগ ছড়িয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
চাষিরা জানান, এক বিঘা জমিতে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে আলু বীজ বুনতে হয়েছে। এর সঙ্গে চাষ ও সারের খরচ মিলিয়ে বিঘা প্রতি আলু চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। জগদীশ শর্মা বলেন,“অন্তত ৬০ বিঘা জমির আলু নষ্ট হয়েছে। লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। স্থানীয় যুবক গৌরাঙ্গ শর্মা জানান, চাষিদের বেশিরভাগই ধারে টাকা নিয়ে চাষ করেছে। খেতের পরিস্থিতি দেখে এখন তাঁদের দিশেহারা দশা। কেমন করে টাকা শোধ করবেন বুঝতে পারছে না তাঁরা। কৃষক সভার জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সদস্য নির্মল চৌধুরী বলেন,“উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। চাষিদের সাহায্যের জন্য কৃষি দফতরের কাছে দাবি জানানো হবে।”