অবরোধের পরে এ বার লঙ্কা ফেলে দিলেন চাষিরা

পথ অবরোধের পর বস্তা ফেলে যাওয়া। লঙ্কার দাম না পেয়ে চাষিরা পাইকারি বাজারে কাঁচা লঙ্কার বস্তা ফেলে চলে গেলেন। বুধবার সকালে বালুরঘাটের তহবাজারের সব্জি বাজারের ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালুরঘাট ও হলদিবাড়ি শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০১:৪৪
Share:

লঙ্কা ফেলে ক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র।

পথ অবরোধের পর বস্তা ফেলে যাওয়া। লঙ্কার দাম না পেয়ে চাষিরা পাইকারি বাজারে কাঁচা লঙ্কার বস্তা ফেলে চলে গেলেন।

Advertisement

বুধবার সকালে বালুরঘাটের তহবাজারের সব্জি বাজারের ঘটনা। এ দিন বালুরঘাট ব্লকের গঙ্গাসাগর, চককাশি, জলঘর, বোয়ালদার এলাকা থেকে চাষিরা পাইকারি বাজারে লঙ্কা নিয়ে আসেন। প্রতি কেজির দাম ৪ টাকায় নেমে যাওয়ায় তাঁরা ক্ষোভে দুঃখে বাজারে বস্তা ফেলে চলে যান। লঙ্কা চাষি রথীন সরকার, জয়ন্ত রায়, বিপুল বর্মনেরা বলেন, “জমি থেকে এক কেজি লঙ্কা তুলতে খরচ আড়াই থেকে তিন টাকা। এরপর বাজারে আনার খরচ রয়েছে। ৪ টাকা কেজিতে লঙ্কা বিক্রি করলে বাজার পৌঁছনোর খরচই উঠবে না। চাষের খরচ তো ভুলেই যান।” মঙ্গলবারই গঙ্গারামপুরের ফুলবাড়িতে শতাধিক চাষি দাম না পেয়ে রাস্তায় লঙ্কা ফেলে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান।

হঠাত্‌ করে লঙ্কার দাম পড়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগকে দায়ী করেছে জেলা উদ্যানপালন দফতর। কৃষি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, “বর্ষার মরশুমে নিচু জমিতে লঙ্কা চাষ করেই এ বারে চাষিরা ডুবেছেন।” চাষিদের দাবি, কৃষি দফতর, উদ্যান পালন দফতরের মধ্যে সমন্বয় না থাকায়, গত দুদিন ধরে লঙ্কা বিপর্যয়ের পরেও সংশ্লিষ্ট দফতরের কোনও অফিসার ও কর্মীর দেখা মেলেনি। আর জেলায় ফল ও সব্জি সংরক্ষণেরও কোনও ব্যবস্থাও নেই। গঙ্গারামপুরের তৃণমূল বিধায়ক সত্যেন রায় বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত লঙ্কাচাষিদের বিকল্প চাষে সাহায্য করতে কৃষি দফতরকে বলা হবে। কৃষিমন্ত্রী অরূপ রায়ের সঙ্গেও কথা বলব।”

Advertisement

দক্ষিণ দিনাজপুরের উদ্যান পালন দফতরের জেলা আধিকারিক জয়দীপ বর্মন বলেন, “গত সপ্তাহে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে লঙ্কা খেত ডুবে যায়। গাছ মরে লঙ্কা নষ্ট হতে দেখে খেতের সমস্ত ফসল চাষিরা তুলে বাজারজাত করায় একযোগে প্রচুর লঙ্কা আমদানি হয়ে পড়েছে। এতে দাম জলের দরে নেমে গিয়েছে।” জেলা কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক মনোরঞ্জন বর্মন বলেন, “ফসলের দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে দফতরের কোনও হাত নেই। আমরা কী করতে পারি?”

সরকারি সূত্রের খবর, এ বছর জেলা প্রায় ৪৫ হেক্টর জমিতে লঙ্কার চাষ হয়েছে। লঙ্কার উত্‌পাদন হয়েছে প্রায় ৪ মেট্রিক টন। অতিরিক্ত ফলনের মধ্যেই টানা বৃষ্টিতে ওই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এক মরসুমে লঙ্কা চাষের জন্য ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি যথেষ্ট। কিন্তু গত সপ্তাহেই এলাকাগুলিতে প্রায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। লঙ্কার খেত জলে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়।

একই অবস্থা জলপাইগুড়ি জেলার হলদিবাড়ির। সেখানে হাটে গত ১০ দিন ধরে লঙ্কা নেই। অন্য বছর বৃষ্টি কম হলে জুন মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত লঙ্কা হাটে আসে। এবার বৃষ্টি বেশি হওয়ায় লঙ্কার খেত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। হলদিবাড়ি ব্লকের কৃষি আধিকারিক সঞ্জীব মিত্র বলেন, “এবার লঙ্কার মরশুমে প্রথমে খরা ছিল। তার পর হালকা বৃষ্টি হলে লঙ্কার ফলন ভাল হত। অল্প দিনে বেশি বৃষ্টি হওয়ার ফলে সমস্ত লঙ্কার খেত নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর হলদিবাড়িতে ২৩৫০ হেক্টর জমিতে লঙ্কার চাষ হয়। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে ১২ জুন অবধি হলদিবাড়িও এবং লাগোয়া এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৭৮৩ মিলিমিটার। গত বছর একই সময়ে বৃষ্টি হয়েছিল। ৩৪৭ মিলিমিটার। হলদিবাড়ি পাইকারি সব্জি বাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর মার্চ মাসে লঙ্কার মরশুম শুরু হওয়ার পর লঙ্কার দাম পড়ে যায়। কারণ উত্তর ভারতে এবার হলদিবাড়ির লঙ্কার চাহিদা ছিল না। সেখানেকার লঙ্কা হলদিবাড়ির আগেই এবার বাজারে পৌঁছায়। সেখানে হলদিবাড়ির লঙ্কা বিহার এবং অসমে যাচ্ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement