Balurghat

স্বামী শ্রমিক, মেয়ের কলেজ সামলাতে ধান কাটছেন ওঁরা

শুধু বালুরঘাট ব্লকই নয়। সম-কাজ করেও মহিলা খেতমজুরদের কম মজুরি মেলার ছবিটা দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থেকে হরিরামপুর ব্লকের প্রায় সর্বত্র বলে অভিযোগ।

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২২ ০৮:৩০
Share:

ধান কাটার ফাঁকে বিশ্রাম মহিলাদের। ছবি: অমিত মোহান্ত।

স্বামী নির্মাণ শ্রমিক। মেয়ে দ্বিতীয় বর্ষের কলেজ ছাত্রী। স্বামীর একার রোজগারে সংসার চলে না। সকালে উঠে অর্চনা কর্মকারকে ছুটতে হয় ধান কাটার কাজে। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট ব্লকের চামটা এলাকার বিপিএলভুক্ত অর্চনার মতো মঙ্গলবার দুপুরে চকভৃগু এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য, মমতা কর্মকারকেও সংসার টানতে আমন ধান কাটতে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে সমান তালে দিনভর কাজ করে যেতে দেখা গেল। জমির ধান কাটার পরে, হাতে মেলে মজুরি বাবদ মাত্র ২০০ টাকা। পুরুষ খেতমজুরদের জন্য বরাদ্দ মজুরি প্রায় ৩০০ টাকা।

Advertisement

শুধু বালুরঘাট ব্লকই নয়। সম-কাজ করেও মহিলা খেতমজুরদের কম মজুরি মেলার ছবিটা দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থেকে হরিরামপুর ব্লকের প্রায় সর্বত্র বলে অভিযোগ। সারা বছর রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মাঠঘাটের কাজ করেন তপনের আউটিনা এলাকার পূর্ণিমা সরকার, কুমারগঞ্জের মোহনার খেতমজুর অর্চনা মুর্মু, শ্যামলী বর্মণ। তাঁদের কথায়, ‘‘জমির মালিককে কিছু বলা যায় না। ওই টাকার মজুরিতে না পোষালে কাজ করতে হবে না, সাফ কথা মালিকদের।’’

এলাকায় ১০০দিনের কাজও নেই। রোজগারের আর কোনও উপায় না দেখে মহিলারা বাধ্য হচ্ছেন কম মজুরিতে কাজ করতে। আর পুরুষদের অনেকে বেশি মজুরির আশ্বাসে পাড়ি দিচ্ছেন ভিন্-রাজ্যে শ্রমিকের কাজে। তপনের খলসি এলাকার খেতমজুর আলি মণ্ডল, মজিবর মণ্ডলরা জানান, শ্রাবণে জমিতে ধান গাড়া ও পাট ধোওয়ার পরে প্রায় দু’মাস কাজ থাকে না। কার্তিক-অগ্রহায়ণে নতুন ধান উঠলেও বেশিরভাগ জমিতে মেশিন এনে ধান ঝাড়াই করা হয়। মজুরিতে কোপ পড়ে বলে অভিযোগ।

Advertisement

আরএসপির কৃষক সংগঠনের জেলা নেতা সাজাহান সর্দার এবং কৃষকসভার জেলা নেতা পরিমল সরকারের অভিযোগ, “পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের তরফে নজরদারির অভাবে মহিলা খেত মজুরেরা বঞ্চিত হচ্ছেন। মজুরির সঙ্গে খাবারের চুক্তিতেও মহিলা মজুরেরা বঞ্চিত। মজুরি বৈষম্য নিয়ে প্রশাসনের কাছে দাবি, আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি।”

জেলা শ্রম দফতর সূত্রে খবর, আগে মাঠে ঘুরে ‘মিনিমাম ওয়েজ ইনস্পেক্টরেরা কৃষি মজুরদের মজুরির বিষয়টি দেখতেন। এখন ওই পদে কেউ নেই। ফলে, নজরদারি কত দূর কী হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। জেলার ডেপুটি শ্রম কমিশনার গোপাল বিশ্বাস বলেন, “খেতমজুরদের ধার্য মজুরি দৈনিক প্রায় ৩০০ টাকা। লিখিত অভিযোগ হলে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।” তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি আবু হায়দর বলেন, “খেতমজুরদের মজুরি ধার্য রয়েছে ৩০০ টাকা। সে ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলা শ্রমিক বলে কোনও ভাগ নেই। বিষয়টি খতিয়েদেখা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement