পুজো নয়, প্রতিবাদে ছক ভাঙলেন ওঁরা

সত্যিই তো! প্রতিবাদ মিছিল তো অনেকেই করে। কিন্তু এমন একটা পুজোর আবহে এমন পোশাক পরে শুধু কয়েকজন মেয়ে এত দৃঢ়তা দেখাতে পারেন?

Advertisement

সজল দে

মেখলিগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:১৯
Share:

অন্যপথে: যৌন হেনস্থার প্রতিবাদে মৌনী মিছিল। বুধবার মেখলিগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র

সরস্বতী পুজোর সকালে মেঘলা ছিল। বেলা বাড়তেই রোদ। আর সেই মুহূর্ত থেকেই শহর মেতে উঠল পুজোর আনন্দে। প্রায় সারাদিন ধরে সেই অবগাহনের পথে আচমকা ‘ধাক্কা’ এসে লাগল যখন, তখন বিকেল। রাস্তায় রাস্তায় রঙিন শাড়ি, কিশোরী-তরুণীদের কলতান, মণ্ডপে মণ্ডপে জটলা। সেই পরিচিত ছবির ছক ভেঙেই কোথা থেকে যেন ঢুকে পড়ল কালো পোশাকের কয়েকজন তরুণী।

Advertisement

এমন উৎসবের দিনে ধাক্কা তো লাগারই কথা! পোশাকের রং দেখে অনেকেই ভাবলেন, এ কি কোনও নাটকের পোশাক? এর-ওর কাছ থেকে শুনে, আর তারপর কাছ থেকে ওই তরুণীদের দেখে বিস্মিত হলেন অনেকে। অনেকে তারিফ করলেন ওঁদের সাহসের। ছক-ভাঙা সাহসের।

সত্যিই তো! প্রতিবাদ মিছিল তো অনেকেই করে। কিন্তু এমন একটা পুজোর আবহে এমন পোশাক পরে শুধু কয়েকজন মেয়ে এত দৃঢ়তা দেখাতে পারেন? বুধবার সেই অভাবনীয় দৃষ্টান্ত দেখালেন মেখলিগঞ্জ শহরের গোটা পঞ্চাশেক তরুণী। এ ব্যাপারে মেখলিগঞ্জ কলেজের অধ্যাপক মৌসুমী দে সরকার বললেন, ‘‘আজ সবাই সরস্বতী পুজোয় ব্যস্ত। সরস্বতীও এক নারী। তাই এমন একটা দিনে ওই নারীদের এ ভাবে পথে নামা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।’’ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা তথা নাট্যকার বাবলি মিত্র বলেন, ‘‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময়ই প্রতিবাদে নামা উচিত। এই বিশেষ দিনে ওই মেয়েরা এ ভাবে প্রতিবাদে শামিল হওয়ায় সমাজের কাছে নিশ্চয় নতুন বার্তা যাবে। ওঁদের সাহসকে কুর্নিশ জানাই।’’

Advertisement

তবে অতশত ভাবেননি ব্রতী রায়, দয়িতা ঘোষ, বাঁশরি দে, দেবলীনা রায় পাটোয়ারিদের মতো প্রতিবাদিনীরা। তাঁদের বক্তব্য, সরস্বতী কে সকলেই আরাধনা করছেন। কিন্তু এই সমাজেই নারীদের উপর নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। শহরে ১১ বছরের এক নাবালিকাকে যে ভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে, তাতে তাঁরা নিজেদের নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলেই সেই সরস্বতী পুজোর দিনে রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছেন।

এঁদের অনেকেই কলেজে পড়ছেন। অনেকেই কলেজের পড়া শেষ করে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত। গত কয়েকদিন ধরেই ওঁরা সকলেই ব্যস্ত ছিলেন এ দিনের প্রতিবাদের প্রস্তুতিতে। ফলে অনেকেই নিজের কলেজের পুজোয় শামিল হতে পারেননি। অনেকেই বাড়িতে বাচ্চাদের নাচ শেখান বা প্রাইভেট টিউশন করেন। কেউ কেউ শেষ মুহূর্তে নাচের স্কুলের পুজোর আয়োজনও বাতিল করেছেন। এ দিন মেয়েদের সাহস জোগাতে অনেকেরই মায়েরাও এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। প্রতিবাদিনী তরুণীদের একটাই বক্তব্য, শহরে যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে আর একটা দিনও দেরি করা উচিত নয়। তাঁরা চান, এই প্রতিবাদে এগিয়ে আসুন শহরের সর্বস্তরের মেয়েরা। তাহলেই এ ধরনের ঘটনা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব।

এ দিন বিকেলে মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে থেকে শুরু হয় এই মৌনী মিছিল। শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করেন প্রতিবাদিনীরা। মিছিলের শেষে মেখলিগঞ্জ থানার সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে আন্দোলনকারী মেয়েরা সিদ্ধান্ত বদল করেন। এরপর মেখলিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে একে অপরের হাত ধরে বার্তা দেন, নারীদের নিরাপত্তায় নারীদেরই আগে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের এই মেলবন্ধনে কিছু সময় পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement