শোকার্ত: বধূর পরিবারের সদস্যরা। নিজস্ব চিত্র
জন্ম থেকেই খুঁড়িয়ে চলতেন রেশমা খাতুন (২৯)। শুক্রবার তাঁর দেহ মিলল বাড়ির কাছে আমগাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায়। প্রতিবন্ধী এই বধূর শ্বশুরবাড়ির দাবি, আত্মঘাতী হয়েছেন মহিলা। কিন্তু রেশমার পরিবারের অভিযোগ, প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাঁর পক্ষে আমগাছে উঠে ওই ভাবে ঝোলা সম্ভব নয়। তাঁকে খুন করা হয়েছে বলেই দাবি রেশমার পরিবারের। তাঁদের অভিযোগ স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধেই।
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ইসলামপুর এলাকায় শুক্রবার সকালে দেহটি উদ্ধার হয়। জন্মের পর থেকেই রেশমা ডান পায়ে খুঁড়িয়ে চলতেন। ফলে তাঁর পক্ষে আমগাছে উঠে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হওয়া সম্ভব নয় বলেই দাবি বধূর পরিজনদের। তাঁদের আরও দাবি, বিয়ের পর দাবিমতো জমি না মেলায় রেশমার উপরে আগেও নির্যাতন চালানো হত। সেই রোষেই রেশমাকে খুন করা হল বলে দাবি তাঁদের। অভিযোগ পেয়ে বধূর স্বামী ওসমান আলিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয়কুমার দাস বলেন, ‘‘বধূর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’
পুলিশ ও মৃতের পরিবার সূত্রে খবর, ওসমান আলি নিজেও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তিনি একটি চোখে দেখতে পান না। ওসমান বছর সাতেক আগে বিহারের আজমনগরের গুল্লি বিবিকে বিয়ে করেন। বাসিন্দারা জানালেন, চার বছর পর তিনি স্বামীকে ছেড়ে চলে যান। তার পর লাগোয়া ভবানীপুরের রেশমাকে বছর দেড়েক আগে বিয়ে করেন তিনি। তাঁদের দু’মাসের শিশুসন্তানও রয়েছে। বধূর পরিবার সূত্রে খবর, কিন্তু বিয়ের সময় পণ হিসেবে পাঁচ কাঠা জমি দেওয়ার দাবি করেন ওসমানরা।
সেই জমি না পেয়েই রেশমার উপর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন অত্যাচার শুরু করেন বলে অভিযোগ। তারপর এ দিন সকালে রেশমাকে বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে না বলে তার বাপের বাড়িতে ফোন করে জানান ওসমান। এর পরই বাড়ির অদূরে একটি আমগাছে তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান বাসিন্দারা।
বধূর মা মুর্শেদা বিবি বলেন, ‘‘আমরা গরিব মানুষ। সময়মতো জমি দিতে পারিনি। কিছুটা সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা যে মেয়েটাকে মেরেই ফেলবে ভাবতে পারিনি। আর ও কী করে গাছে উঠবে। আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলল ওরা।’’
এই প্রসঙ্গে ওসমানের দাদা আইয়ুব অবশ্য বলেন, ‘‘কারও উপর কোনও নির্যাতন করা হয়নি। এ দিন সকালে ও নিজেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। পরে দেখলাম আত্মহত্যা করেছে। ও কেন এটা করল আমরা কিছুই জানি না।’’