থানায় দম্পতি। নিজস্ব চিত্র
ডাইনি অপবাদ দিয়ে এক আদিবাসী মহিলাকে মারধর করে তাঁকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল আত্মীয়দের একাংশের বিরুদ্ধে। স্ত্রীর প্রাণ বাঁচাতে তাঁকে নিয়ে রায়গঞ্জ থানায় আশ্রয় নেন তাঁর স্বামী। বৃহস্পতিবার সকালে ওই অভিযোগকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রায়গঞ্জ থানার শীতগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের একর এলাকায়।
ওই আদিবাসী মহিলার নাম সামিয়া হাঁসদা। তাঁর স্বামীর নাম মন্টু হেমব্রম। এ দিন দুপুরে সামিয়া তাঁর সাতজন আত্মীয়ের বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় মারধর ও খুনের চেষ্টার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। রায়গঞ্জের বিডিও রাজু লামা বলেন, ‘‘ওই দম্পতিকে আপাতত তাঁদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার প্রশাসনের একটি প্রতিনিধি দল একর এলাকায় গিয়ে আদিবাসী বাসিন্দাদের বোঝাবে। এরপর ওই দম্পতিকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।’’ উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সুমিত কুমারের বক্তব্য, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করব না।’’
সামিয়া ও মন্টু নিঃসন্তান। মন্টু দিনমজুরির কাজ করেন। টিনের তৈরি তিনটি ঘর নিয়ে ওই দম্পতির সংসার। সামিয়ার অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাঁর ভাসুর শুটু হেমব্রম, তাঁর স্ত্রী সুরজমনি হেমব্রম ও আত্মীয়েরা তাঁদের জমি-বাড়ি দখলের চেষ্টা করছেন। বুধবার রাতে অভিযুক্তেরা ডাইনি অপবাদ দিয়ে সামিয়ার শোওয়ার ঘরে ঢুকে তাঁকে লাঠিসোটা দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এরপর অভিযুক্তেরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তঁকে খুন করারও চেষ্টা করেন। বেগতিক বুঝে মন্টু শোওয়ার ঘরের টিনের বেড়া ভেঙে সামিয়াকে নিয়ে পালিয়ে পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। অভিযুক্তেরা সেখানেও হামলা করতে পারে, এই আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার সকালে তাঁরা দু’জনে রায়গঞ্জ থানায় গিয়ে আশ্রয় নেন। এ দিন বিকেলে পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে ওই দম্পতিকে তাঁদেরই অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠানো হয়। পুলিশের দাবি, ওই মহিলার উপর ফের হামলা হতে পারে। সেই আশঙ্কায় এ দিন ওই মহিলা ও তাঁর স্বামীকে তাঁদেরই এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
সামিয়ার কথায়, ‘‘আমাদের সন্তান নেই। তাই আমার ভাসুর, ভাসুরের স্ত্রী ও আত্মীয়েরা ডাইনি অপবাদ দিয়ে আমাকে খুন করে এবং আমার স্বামীকে তাড়িয়ে আমাদের জমি ও বাড়ি দখল করার ছক করেছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছি।’’ যদিও শুটু ও সুরজমনি পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, তাঁরা সামিয়ার উপর হামলা চালাননি। প্রতিবেশীদের একাংশের সঙ্গে গোলমালের জেরে সামিয়া ও তাঁর স্বামী পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন।