উজ্জ্বল: মা ও দিদিমার সঙ্গে ববিতা।
বাবা-মা দু’জনেই চা বাগানের শ্রমিক। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের মেয়ে ববিতা ওরাওঁ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি মহিলা ফুটবলার হিসেবেও পরিচিত ববিতা। স্থানীয়দের কাছে শেফালি নামেই পরিচিত ববিতা।
ডেঙ্গুয়াঝাড় বাগানের ১০ নম্বর শ্রমিক লাইনেই বেড়ে ওঠা ববিতার কথায়, চা বাগানের শ্রমিক লাইনগুলিতে নাবালিকাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রবণতা যথেষ্টই। তিনি বলেন, ‘‘নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করে মেয়েদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে প্রচার চালানো জরুরি। এই কাজে নিজেকেও যুক্ত করতে চাই।’’
২০১৭ সালে বীরপাড়ার একটি হিন্দি আবাসিক স্কুল থেকে মাধ্যমিকে ৪১ শতাংশ নম্বর। এর পরে ববিতাকে বাড়ি থেকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয় বলে জানান তিনি। মেয়ের পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছে ও জেদের কাছে সেদিন হার মানতে হয়েছিল বাড়ির লোকেদের। ২০১৯ সালে ৬২ শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন ববিতা। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্ন বুকে নিয়েই এগিয়ে চলা ববিতাকে আবারও বিয়ে দিয়ে দেওয়ার জন্য আত্মীয়স্বজনেরা পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন।
নিজের চেষ্টায় রাজগঞ্জ গভর্নমেন্ট পলিটেকনিক কলেজে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন ববিতা। ৭১ শতাংশ নম্বর পেয়ে ববিতা জুনিয়র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেছেন। ববিতা বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই ক্যাম্পাসিংয়ে চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছি। ইচ্ছে আছে বি টেক পড়ার।’’
রবিবার বাগানে গিয়ে এই কৃতীকে সংবর্ধনা জানিয়েছেন জলপাইগুড়ির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। সংস্থার সম্পাদক অঙ্কুর দাস বলেন, ‘‘ববিতা আমাদের সকলের গর্ব। ইচ্ছে ও অদম্য জেদই ওঁর সাফল্যের মূল চাবি কাঠি। ওঁকে সম্মান জানাতে পেরে খুশি আমরা।’’