ঠোকাঠুকি: বীরপাড়ায় বিমল গুরুং। সুকনায় বিনয় তামাং। রবিবার পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন। ছবি: নারায়ণ দে ও বিনোদ দাস।
আবার কি অশান্ত হতে চলেছে পাহাড়? আবার কি স্তব্ধ হবে পর্যটন ব্যবসা? বিমল গুরুং ও বিনয় তামাংয়ের দ্বৈরথে এমনই আশঙ্কার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পাহাড়ের মানুষজন।
মাঝখানে কিছুদিন বাদ দিলে প্রায় এক দশক অশান্তির জেরে স্বাভাবিক জনজীবন, ব্যবসা প্রায় মুখ থুবডে পডেছিল পাহাডে। স্বাভাবিক হতে শুরু করার পরেই ফের করোনায় ধসে গিয়েছে পর্যটন ব্যবসা। এরই মধ্যে মোর্চার দুই গোষ্ঠীর লডাইয়ে যদি নতুন করে পাহাড অশান্ত হয়, তা হলে চরম আর্থিক বিপদে পডতে পারেন পাহাডবাসী। রবিবার সুকনায় মোর্চা নেতা বিনয় তামাং-অনীত থাপাদের সভার পর ফের সেই অশান্তির মেঘ জমার ইঙ্গিত পাচ্ছেন তাঁরা। গত ৬ ডিসেম্বর শিলিগুডিতে বিমলের সভার পরেই পাহাডে কোন্দলের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হতে শুরু করেছিল। এ দিন সুকনায় বিনয়দের পাল্টা সভার পর কিন্তু সেই সম্ভাবনার আগুনে ফের ঘি পডল বলেই মনে করছেন সকলে।
২০০৭ সাল থেকে শুরু হয়েছিল পাহাডে অশান্তির বাতাবরণ। পরে ২০১৩-’১৪-র অশান্ত সময় পেরিয়ে ২০১৭ সালের আন্দোলনে ১০৫ দিনের পাহাড বন্ধ। কার্যত নাভিশ্বাস তুলেছিল পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষের। বিমল অন্তরালে চলে গেলে অশান্তি থেমে গিয়ে পাহাড স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছিল। কিন্তু ভোটের আগে মোর্চার দুই গোষ্ঠীর রেষারেষির জেরে সেই সুস্থতা ফের ঘেঁটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সুকনায় এ দিনের সভায় বিনয়-অনীতেরা ছাডাও কেন্দ্রীয় কমিটি, চা বাগান, যুব, মহিলার বেশিরভাগ নেতা নেত্রীই তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন বিমল শিবিরের দিকে। হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন রাজ্য সরকারকে। শাসক দলের নীতির ফলে যে পাহাডে অশান্তি নতুন করে ফিরতে পারে, তারই ইঙ্গিত দিয়েছেন সকলেই। সভায় দলের মহিলা মোর্চার নেত্রী সিরিং দাহাল বলেন, ‘যে প্রতিশ্রুতি রাজ্য দিয়েছে, তা পালনের সময় এসে গিয়েছে। পালিয়ে যাওয়া নেতা দিয়ে হবে না। সেটা রাজ্যকেও বুঝতে হবে। তা না হলে আমরা শান্তি যেমন জানি, ক্রান্তিও জানি।’’
নতুন করে অশান্তি যাতে এডানো সম্ভব হয়, তাই চাইছেন মোর্চার বিনয়পন্থীরা। সভায় অনীত বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের আন্দোলন পাহাডের ক্ষতি করেছে। সেই ক্ষতিপূরণ কে দেবেন, বিমল? তাই আমরা নতুন রাস্তা নিয়েছি। শান্তি বজায় রেখেই নতুন করে গোর্খা জাতির আত্মসম্মান স্থাপনের। তাই আমাদের সঙ্গ দিন। পাহাডের নকশা বদলে দেব।’’