ধৃত বিজেপি নেতা। নিজস্ব চিত্র।
এক দিকে, ওষুধের দোকান, অন্য দিকে, হোটেল বা ধাবার মালিক। শিলিগুড়ি শহরের পাশে, গজলডোবার রাস্তার সরকারি জমি দখলের মামলায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতা উত্তম রায়ের সংসার ভালই চলছিল। গ্রামীণ এলাকায় কিসান মোর্চার অন্যতম জেলা সম্পাদক (সদ্য প্রাক্তন) হিসাবে ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতিও করতেন পুরোদমে। তাঁর স্ত্রী মায়ারানি রায় দাস এখন জেলার মহিলা মোর্চার অন্যতম সম্পাদক। শাসক দলের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু সরকারি অভিযোগের পরে জিজ্ঞাসাবাদের শেষে গ্রেফতার হবেন, শুক্রবার ভাবতে পারছিলেন না গজলডোবার মিলনপল্লির বাসিন্দা উত্তম রায়। জলপাইগুড়ি আদালতে যাওয়ার পথে বার বার বলেন, ‘‘আমাকে ডাকা হয়েছিল। নানা কথা, জিজ্ঞাসাবাদ করেই গ্রেফতারের কথা বলা হয়। থানা ডেকে জোর করে আটকে দেওয়া হয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার রাতে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ‘ভোরের আলো’ থানা গ্রেফতার করেছে এই বিজেপি নেতাকে। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিজেপি নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে ‘অস্বস্তিতে’ রয়েছেন। স্থানীয় বিধায়ক বিজেপির শিখা চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। তাতে সত্য বেরোবে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, গ্রেফতারের পরে উত্তমের দাবি, প্রায় ৩৫ বছর আগে তিনি জমিটির ‘পাট্টা’ পান। তবে রাজগঞ্জ ভূমি সংস্কার আধিকারিকের দফতর থেকে করা লিখিত অভিযোগে জানানো হয়েছে, জঙ্গলমহল মৌজার প্রায় এক একর খাস জমিতে একটি হোটেল চলছে, যার মালিক উত্তম রায়। সম্প্রতি দুই রেভিনিউ ইনস্পেক্টর (আরআই) জমিটি নিয়ে তদন্ত করার পরে খাসজমি ‘দখলের’ বিষয়টি সামনে আসে। পুলিশ এই অভিযোগ পাওয়ার পরে বিজেপি নেতাকে ধরে। সেখানে কংক্রিটের নির্মাণ করে ছোট ছোট বসার ঘর বানিয়ে হোটেল বা ধাবা চলছিল বলে অভিযোগ। প্রশাসন সূত্রের খবর, আজ, শনিবার ব্লক ভূমি সংস্কার দফতরের তরফে জমিটির সমীক্ষা করে, পুলিশকে রিপোর্ট দেওয়া হবে।
বিজেপি নেতার তরফে আদালতে আইনি-লড়াই করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তাঁর স্ত্রী বিজেপি নেত্রী মায়ারানি বলেন, ‘‘পরিকল্পনা করে স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছে। খাসজমির অনেক জবরদখলকারী রয়েছে। তারা রাজ্যের শাসক দলের বলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’’ আর রাজগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা তথা জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপির সম্পাদক নিতাই মণ্ডলের দাবি, "গজলডোবা এলাকায় তৃণমূলের নেতারা প্রচুর জমি দখল করেছেন। সে নেতারাই বিজেপি নেতাদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসাচ্ছেন। পুরোটাই যে তৃণমূল করছে, তা এলাকার মানুষ জানেন।" এলাকার তৃণমূল নেতারা জানান, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকায় জমি জবরজখল, জমির অবৈধ কারবারে ভরে গিয়েছে। শুধু শাসক দলের দিকে সে ব্যাপারে আঙুল তুলে লাভ নেই। বিজেপি নেতারা যে কম যাচ্ছেন না, তা উত্তম রায়ের গ্রেফতারে স্পষ্ট হয়েছে।