আশাপূরণ: স্বামী শঙ্করের হাতে দু’টি অক্সিজেন সিলিন্ডার তুলে দিলেন জুলি রায়। পাশে তাঁদের ছোট ছেলে ওম ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক প্রকৃতিপরম রায়। কোচবিহারে সোমবার। নিজস্ব চিত্র
বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানের জন্য একবছর ধরে টাকা জমিয়েছিলেন কোচবিহারের গুড়িয়াহাটির জুলি রায়। বাড়ির সামনে ছোট একটা মুদিখানার দোকান চালান তিনি। পেশায় গাড়ির চালক স্বামী শঙ্কর রায়কে সংসার চালাতে সাহায্য করতেই তাঁর এমন চেষ্টা। সেই রোজগার থেকেই টাকা জমানো শুরু। তবে, অনুষ্ঠান আড়ম্বরে নয়, স্বামীর স্বপ্নপূরণে সেই টাকা খরচ করলেন জুলি। সোমবার, বিবাহ বার্ষিকীর দিনে স্বামীকে অক্সিজেন সিলিন্ডার উপহার দিলেন জুলি। কারণ করোনা কালে তা শঙ্করের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজে লাগবে। স্ত্রীর কাছ থেকে বিশেষ দিনে এমন উপহার পেয়ে খুশি শঙ্করও।
এ দিন জুলি বলেন, ‘‘আমার স্বামী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। করোনার এই সময়ে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে সংস্থার সদস্যদের নিয়ে নিজের সাধ্যমতো কাজ করছেন। কিছুদিন আগে বাড়িতে ওঁকে ফোনে কথা বলতে শুনেছিলাম। অক্সিজেনের মোবাইল ভ্যান চালু করা ইচ্ছে রয়েছে। কিন্ত সেই স্বপ্ন পূরণের টাকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করছিল। তখন বিবাহ বার্ষিকীর জন্য জমানো টাকা দিয়েই ওঁর স্বপ্নপূরণের সিদ্ধান্ত নিই।’’
শঙ্কর বললেন, ‘‘সামাজিক কাজে বরাবর জুলি আমায় উৎসাহ দিয়ে এসেছে। সাধ্যমতো পাশে থাকে। এখন খুব দ্রুত মোবাইল অক্সিজেন ভ্যান চালু করতে পারব। দিনরাত যখনই এলাকার কারও প্রয়োজন হবে, ভ্যান নিয়ে পৌঁছে যাব।’’
রায় পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের সঙ্গে একটি অক্সিমিটার, ফ্লো মিটার, স্যানিটাইজ়ার মেশিনও স্বামীর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে কাজের জন্য দিয়েছেন জুলি। সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। নিজে যে ছোট গাড়ি চালান, সেটিকেই আপাতত অক্সিজেন মোবাইল ভ্যান হিসেবে সাজিয়ে নেবেন বলে শঙ্কর জানালেন। তাঁর কথায়, ‘‘বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম এই সময়ে অক্সিজেনের মোবাইল ভ্যান চালুর কথা। একজন শুভানুধ্যায়ী অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাসও দেন। বিশেষ অসুবিধেয় তাঁর হচ্ছিল না। আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। এ নিয়ে ফোনে অনেকের সঙ্গে কথা হত। তা শুনে জুলি যে এভাবে এগিয়ে আসবে, ভাবতে পারিনি।’’
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক প্রকৃতিপরম রায় বলেন, ‘‘অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড়ের ব্যাপারে আমাদেরই এক সদস্য বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জুলিকে সাহায্য করেন। অনেক কষ্টে সেটা জোগাড় হয়। জুলির কাজে উৎসাহিত হয়ে এভাবে অন্যরাও এগিয়ে এলে করোনার বিরুদ্ধে আমাদের সকলের লড়াইটা অনেক সহজ হয়।’’