ভোটের মুখে সমীক্ষা কেন ক্ষোভ সাবেক ছিটমহলে

ভোটের দিন এগিয়ে আসছে কোচবিহারে। তার আগে জেলার নানা এলাকায় ছিটমহল থেকে আসা নতুন ভোটারদের মত যাচাই করতে সমীক্ষায় নেমেছে সাবেক ছিটমহলে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি। তা নিয়ে ক্ষোভ-আশঙ্কা জানা বাঁধছে নতুন ভোটারদের মধ্যে।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১৫
Share:

ভোটের দিন এগিয়ে আসছে কোচবিহারে। তার আগে জেলার নানা এলাকায় ছিটমহল থেকে আসা নতুন ভোটারদের মত যাচাই করতে সমীক্ষায় নেমেছে সাবেক ছিটমহলে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি। তা নিয়ে ক্ষোভ-আশঙ্কা জানা বাঁধছে নতুন ভোটারদের মধ্যে।

Advertisement

ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, ভোটের আগে কায়দা করে কোন দলের পক্ষে ভোট যাবে সেটা বোঝার জন্যই ওই সমীক্ষা হচ্ছে। ফলে, অবিলম্বে সমীক্ষা বন্ধ করা ও যতটা সমীক্ষা হয়েছে তার রিপোর্ট ভোটের আগে বাইরে যাতে প্রকাশ না হয় সে জন্য জেলা পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন বাসিন্দাদের অনেকেই। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, ভোটের আগে এ ধরনের সমীক্ষা করা বেআইনি। কোথাও সমীক্ষা হলেও ভোটের আগে সেই রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করলে সংশ্লিষ্ট সমীক্ষক কিংবা সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে কমিশন। তাই সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল সহ সব দলের পক্ষ থেকেই ছিটমহলের ওই কমিটির ভূমিকা নিয়ে জেলা প্রশাসনকে নালিশ জানানো হয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “ বিশদে খোঁজ নেওয়া হবে। নির্বাচন বিধি ভঙ্গ করে ভোট সংক্রান্ত সমীক্ষা কিংবা তার রিপোর্ট প্রকাশ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে ছিটমহলের ওই কমিটির মুখ্য সমন্বয়কারী দীপ্তিমানবাবু অবশ্য কমিশনের নির্দেশের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সমীক্ষা করে মানুষের মনোভাব বুঝতে চাইলে কেউ বাধা দিতে পারেন না। যে যাই বলুন, সমীক্ষা রিপোর্ট রবিবার দিনহাটায় কমিটির বৈঠকে প্রকাশ হবে। বৈঠক হবে। ওই বৈঠকের পরে আমাদের সংগঠন কোন দিকে থাকবে তা জানাবে। এতে বিধিভঙ্গ হয় না।’’

Advertisement

যা শোনার পরে জেলা প্রশাসনের অনেকেই চমকে গিয়েছেন। কারণ, এমন চললে নানা সংগঠন ভোটের আগে সমীক্ষা করতে শুরু করতে পারে। সে ক্ষেত্রে সমীক্ষার সময়ে গোলমালের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না পুলিশের অনেকেই। তা হলে সব জানা সত্ত্বেও কোচবিহার জেলা পুলিশ-প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে কেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দানা বাঁধছে।

নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার বাসিন্দাদের কাছে পাঁচটি প্রশ্ন নিয়ে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। গত রবিবার থেকে সাবেক মোট ৪১টি সমীক্ষক দল ওই কাজে নেমেছেন। প্রশ্ন মালার মধ্যে রয়েছে, ‘‘গত ৬৮ বছরের সঙ্গে এখন কি পার্থক্য লক্ষ্য করছেন?’’

‘‘ভোটার কার্ড, আঁধার কার্ডের মত পরিষেবায় আপনি কি খুশি?’’

‘‘দাবি আদায়ে আপনি কি ভবিষ্যতে আন্দোলনে বিশ্বাসী?’’

‘‘জমি সমীক্ষা না পরিষেবা কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?’’ এবং ‘‘স্থানীয় এলাকায় না বাইরের রাজ্যে কাজ করতে চান?’’

তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ ভোট প্রক্রিয়ার মধ্যে এ ধরণের সমীক্ষার অধিকার কারও নেই।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে বলেন, “নির্বাচন বিধি লাগু রয়েছে। এই সময় কোন সমীক্ষা করা যায় না। কিভাবে এমন সমীক্ষা চালানোর কথা বলা হচ্ছে সেটাই প্রশ্ন। এতে সাধারণ ভোটাররা প্রভাবিত হতে পারেন। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “কোন গোষ্ঠী নিজের লোকদের মধ্যে সমীক্ষা করতে পারে। তবে ভোটে কে কাকে গ্রহণ করবেন বা বর্জন করবেন সেই মতবাদ চাপিয়ে দেওয়া যায় না। সেটা হলে তা গণতন্ত্রের পক্ষে উদ্বেগের।” কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী অবশ্য বলেন, “ভোটের মুখে এমন সমীক্ষা করা যায় না। নিজের ভোট মানুষ নিজে দেবেন। খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়।’’

কমিটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত ৩১ জুলাই ভারত ও বাংলাদেশের আওতাধীন সমস্ত ছিটমহল বিনিময় হয়। ফলে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল এলাকা ভারত ভূখন্ডের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। সেখানকার ১৮,৮৫৬ জন বাসিন্দা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হন। অন্যদিকে বাংলাদেশের আওতায় থাকা ভারতের সাবেক ছিটমহল থেকে ৯২১ জন ঠিকানা বদলে এদেশের কোচবিহার জেলায় এসেছেন। ওই বাসিন্দাদের দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়িতে প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি অস্থায়ী শিবিরে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিবারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে ৯ হাজার ৭৭৬ জন প্রাপ্তবয়স্কের নাম চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় উঠেছে। দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ, সিতাই, শীতলখুচি, তুফানগঞ্জ এলাকার ৪২ টি বুথে ওই বাসিন্দাদের ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কমিটির কর্তারা জানান, অস্থায়ী শিবিরে থাকা বাসিন্দারাই ওই সব এলাকায় সমীক্ষা শুরু করেছেন। বাকি সাবেক ছিটমহলের মধ্যে যে ৩১টি এলাকায় জনবসতি রয়েছে সেখানেও স্থানীয়দের মাধ্যমেই সমীক্ষার কাজ হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement