চলছে সেতু পরিদর্শন। নিজস্ব চিত্র
সেতু দেখতে এসেছেন পরিদর্শক দল। শুক্রবার দুপুরে। তাঁদের মধ্যে কথোপকথন চলছিল জলপাইগুড়ি শহরে করলা নদীর উপর সুভাষ সেতুতে দাঁড়িয়ে। বৃষ্টি হচ্ছিল, সকলে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে। সেতুতে উচ্চপর্যায়ের পরিদর্শনের জন্য দু’দিকের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
“সেতুর দায়িত্ব কোন দফতরের?” সেতুর ক্ষয়িষ্ণু স্তম্ভ দেখে প্রশ্ন করেছিলেন জলপাইগুড়ির ডিএসপি (সদর) প্রদীপ সরকার। পাশে দাঁড়ানো পূর্ত দফতরের (নির্মাণ) নির্বাহী বাস্তুকার কেশব গঙ্গোপাধ্যায় জবাব দিলেন, “সেতুটি আমাদের দায়িত্বে নয়।” পরিদর্শন দলের কেউ একজন বললেন, “পূর্ত দফতরের নির্মাণ বিভাগের যখন নয়, তখন সেতুটি নির্ঘাত পূর্ত সড়ক বিভাগে। রাস্তা তো সড়ক বিভাগই তৈরি করে।” পকেট থেকে মোবাইল বের করে ডিএসপি ফোন করলেন পূর্ত সড়ক বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকারকে। কিছুক্ষণ কথাবার্তার পরে ডিএসপি বেজার মুখে বললেন, “পূর্ত সড়ক তো বলছে, রাস্তা ওঁরা তৈরি করেছিল কিন্তু এখন আর ওদের দায়িত্বে সেতু নেই।”
তাহলে সেতু কার দায়িত্বে? ডিএসপি এবার প্রশ্ন করলেন সঙ্গে থাকা পুরসভার প্রতিনিধি পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য সৈকত চট্টোপাধ্যায়কে। সৈকতের পত্রপাঠ উত্তর, “এ রাস্তা জেলা পরিষদের।” এ বার খোঁজ শুরু হল জেলা পরিষদের প্রতিনিধির। তখন খবর এল রাস্তাটি কোনও একসময়ে জেলা পরিষদের ছিল বটে, এখন পুরসভাকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে কথা শুনে সৈকত বললেন, “ঠিক আছে, পুরসভার তরফে পূর্ত দফতরকে এই সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে অনুরোধ করে জরুরি চিঠি পাঠানো হবে। প্রয়োজন হলে পুলিশ প্রশাসন সেতুতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।” তারপরে ফিরে গেল সেতু পরিদর্শনকারী দল। সেতুটি কোন দফতরের তা নিয়ে সেতুতে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পরেও সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা নিয়ে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হল না, ঝুলে থাকল সেতু নিয়ে আশঙ্কা।
গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হয়েছে জলপাইগুড়িতে। তার জেরে সেতুর ক্ষতি হয়েছে এমন তথ্য পৌঁছয় জেলা প্রশাসনের কাছে। সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের উচ্চস্তর থেকেও এমন রিপোর্ট প্রশাসনের কাছে এসেছে। ডিএসপি, কোতোয়ালি থানার আইসি বিপুল সিংহকে দ্রুত পরিদর্শনের নির্দেশ দেন দেলা পুলিশ সুপার। পুলিশের তরফেই দ্রুত পরিদর্শনের ব্যবস্থা হয়। পরিদর্শনকারী দলটি প্রথমে দিনবাজারের করলা সেতুতে যায়। সেখানে বড় কোনও ত্রুটি না দেখে দলটি চলে আসে বাবুপাড়ার সুভাষ সেতুতে। সেখানে প্রতিনিধি দলটি দেখে সেতুর স্তম্ভগুলি অসমান, ক্ষয়ে গিয়েছে। যে রাস্তার ওপরে এই সেতু তা নিয়ে পূর্তদফতর, জেলা পরিষদ এবং পুরসভার টানাপড়েন দীর্ঘদিনের। শুক্রবার বৃষ্টি মাথায় সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করতে এসে তার সাক্ষী হল পুলিশও।