আলুর দোকানে ভিড়। নিজস্ব চিত্র
গত সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শহরের খোলা বাজারে আলুর দাম ছিল প্রতি কেজি ৩০ টাকা। সেই দাম এখন কোথাও ৩৫ টাকা, কোথাও আবার ৪০ টাকা। জোগানে টান পড়েছে, আর তার জেরেই তরতরিয়ে উপরে উঠছে আলুর দাম—এমনটাই যুক্তি শোনা যাচ্ছে বাজারগুলিতে। তবে কতটা কম জোগান যে এই ভাবে দাম বাড়ছে, উঠেছে সেই প্রশ্নও।
উত্তরবঙ্গের আলুর ব্যবসার আতুরঘর বলা হয় ধূপগুড়িকে। সেখানকার খোলা বাজারেও আলুর দাম প্রায় ৪০ ছুঁইছুঁই। কিছুদিন আগে আলুর দাম নিয়ে খোঁজখবর করেছিল রাজ্য পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখা। তাদের পাওয়া তথ্য এবং ব্যবসায়ীদের পরিসংখ্যান মেলালে মরসুমের শুরুতে ১ কোটি ৬০ লক্ষ বস্তায় আলু বোঝাই হয়ে উত্তরবঙ্গের হিমঘরগুলিতে ঢুকেছিল। মে মাস থেকে এখনও পর্যন্ত হিমঘর থেকে আলু বেরিয়ে বাজারে গিয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে কম-বেশি ৭২ লক্ষ বস্তা আলু হিমঘরে মজুত রয়েছে। প্রতি প্যাকেটে ৫০ কেজি করে হিসেব করলে, মজুত প্রায় ৩৬ কোটি কেজি। অন্য বছরের চাহিদার সঙ্গে তুলনা করলে যা দিয়ে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের সব বাসিন্দাদের আলু খাওয়ানো সম্ভব বলে ব্যবসায়ীদেরই একাংশের দাবি।
তাহলে দাম বাড়ছে কেন?
অভিযোগ, সঙ্কটের কৃত্রিম বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে। এই বছর আলুর উৎপাদন দেশ জুড়ে মার খেয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। উত্তর ভারতের আলুর মূল ব্যবসা কেন্দ্র আগরা থেকে অসম-বিহারে আলু যায়। যার পরিমাণ এ বছর অনেকটা কমেছে। সেই ঘাটতি পূরণ করতে মরসুমের শুরুর দিকে ধূপগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের আলু অসম-বিহারে যায়। ফলে অন্য বছরের তুলনায় এ বছরে এই সময়ে হিমঘরে তুলনামূলক ভাবে কম আলু রয়েছে। ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, এই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী একাংশ আলুর দাম বাড়িয়ে বেশি পরিমাণে লাভ তুলতে শুরু করেছেন। তাঁদের দাবি, হিমঘর থেকে বের হওয়া আলু প্রতি কেজি ১৯-২৩ টাকা দাম চাওয়া হচ্ছে। অন্যান্য বছরে যা ১১-১৫ টাকা থাকে। ফলে সেই আলু খোলা বাজারে আসতে দাম আরও বাড়ছে।
করোনা আবহও দাম ঊর্ধ্বমুখী করেছে আলুর। প্রতি বছরই ভুটানের আলু বাজারের জোগানে ভারসাম্য রাখে। করোনা সংক্রমণের জেরে গত এক সপ্তাহ ধরে ভুটানে ব্যবসায়ীরা কাজকর্ম বন্ধ রেখেছেন বলে খবর। ফলে ভুটান থেকে আলু উত্তরের বাজারে তেমন ঢোকেনি। তাতেই চাহিদা বেড়েছে। সেই সুযোগও অসাধু ব্যবসায়ীরা কাজে লাগাচ্ছেন বলে অভিযোগ। উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কার্তিক দাস বলেন, “আলু এবার তুলনামূলক কম রয়েছে। সে কারণে হয়তো দাম কিছুটা বাড়ছে। আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে চেষ্টা করছি দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে।”
হিমঘরে যাঁদের আলু রয়েছে সেই ব্যবসায়ীদের নাম, ফোন নম্বর জোগাড় করেছে প্রশাসন। জলপাইগুড়ির সদর মহকুমাশাসক রঞ্জন কুমার দাস বলেন, “কৃষিবিপণন দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ হচ্ছে।”