ফাইল চিত্র।
শিলিগুড়ি শহরের পানীয় জল সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা যে অত্যন্ত জরুরি সে কথা শাসক, বিরোধী সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেন। ভোট আসলেই যাকে সামনে রেখে নানা প্রতিশ্রুতি, আশ্বাস, নানা চেষ্টার দাবি নানা সময়েই উঠেছে। যে কাজ থমকে থাকায় রাজনীতি করার অভিযোগও কম ওঠেনি। কেন না বছর আটেক আগে রাজ্যের কারিগরি দফতর ৩০০ কোটি টাকা ওই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ঘোষণা করে। ঠিক হয় গজলডোবা থেকে তিস্তার জল পরিস্রুত করে শহরে সরবরাহ করা হবে। কিন্তু তৃণমূল পুর বোর্ডে না-আসায় প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে বাম, কংগ্রেসের মতো দলগুলো। প্রকল্পের খরচও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কোটি।
সেই জল প্রকল্পের ভবিষ্যত কী? শহরের মানুষ পর্যাপ্ত পানীয় জল দুই বেলা অনেক সমই পাচ্ছেন না। কোতাও জলের চাপ নেই। কোথাও জল অপরিষ্কার।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিরোধী দলনেতা রঞ্জন সরকারের দাবি, ‘‘আমরা ক্ষমতায় এলে পাঁচ বছরেই বিকল্প প্রকল্প গড়ে তুলব। বর্তমান বোর্ডের বিদায় ঘন্টা বেজে গিয়েছে। তাদের দিয়ে এতদিনে কোনও কাজ হয়নি। আর হবেও না।’’ বিরোধী দলনেতার দাবি, মাথা অকেজো হলে শরীরের দাম থাকে না। এই পুরবোর্ডের যিনি মাথা তিনি অকেজো হয়ে পড়েছেন।
বিরোধীদের এ সব কথার জবাব দিতে চাননি মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। শিলিগুড়ি পুরসভায় ক্ষমতাসীন বাম বোর্ডের দাবি, উন্নয়নের প্রশ্নে তারা লড়াই করে চলেছেন। দিন কয়েক আগেই জল প্রকল্পের মতো কাজে শিলিগুড়িকে অম্রুত প্রকল্পে অধীনে আনার দাবি তুলে আবার রাজ্য সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুর এবং নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিবের সঙ্গেও সম্প্রতি কথা বলে এসেছি। এখন কোন প্রকল্প পাঠানো হবে, অনুমোদন করা হবে তার গুরুত্ব সবই নিয়ম মাফিক কম্পিউটার ব্যবস্থায় খতিয়ে দেখার পদ্ধতি শুরু হয়েছে। তাতে দরকারি এমন কোনও প্রকল্পের কাজ আর আটকে থাকবে না। আমরা আশাবাদী ভবিষ্যতে জল প্রকল্পের কাজ আর আটকাবে না।’’ তবে এ সবই ভোটের মুখে আশ্বাস বলে মনে করছেন অনেকে।
এতদিন কেন আটকে ছিল? মেয়রের দাবি, ‘‘আমরা বারবার রাজ্যকে বলেছি। অম্রুত প্রকল্পে জলপাইগুড়ির মতো শহর পানীয় জল প্রকল্পে কয়েকশো কোটি টাকা পেয়েছে। শিলিগুড়ি পেল না। শিলিগুড়ির মানুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কত আর্থিক প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। রাজ্য সভার সাংসদদের কাছ থেকে অর্থ জোগার করতে হয়েছে উন্নয়ন কাজের। বারবার বলার পর সম্প্রতি কিছু টাকা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে মিলছে।’’
আশ্বাসে পিছিয়ে নেই বিজেপি। তাদের সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, ‘‘শিলিগুড়িতে যে কয়েকটি বড় সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে একটি পানীয় জল সররাহ। অবিলম্বে উপযুক্ত প্রকল্প নেওয়া জরুরি। আমরাও চেষ্টা করছি।’’দুই দশক আগে তৈরি ফুলবাড়ি ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পরিস্থিতি ভাল নয়। তিস্তা মহানন্দা লিঙ্ক ক্যানেল থেকে ওই প্রকল্পে জল সংগ্রহ করে তা পরিস্রুত করে পাঠানো হয়। বাম জমানায় যখন গড়ে তোলা হয়েছিল তথন ভবিষ্যতের কথা ভাবা হয়নি বলে অভিযোগ। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে শহরের জলাধারে জল সরবরাহ করতে দুটি রাইজিং মেন লাইন করার কথা থাকলেও একটি করা হয়েছে। তাতে ওই লাইনে ‘লিক’ হলে বা মেরামতির প্রয়োজন হলে জল সরবারহ বন্ধ হয়ে পড়বে। বছর দুয়েক আগে এশিয়ান হাইওয়ের কাজের জন্য সেই লাইনের একাংশ সরাতে হলেও বিপাকে পড়তে হয়। কয়েকদিন জলপাইগুড়ি পুরসভার সাহায্য নিয়ে পানীয় জলের ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা করে পরিস্থিতি সামলাতে হিমসিম খেতে হয়। এরপর কিছু ওয়ার্ডে বিকল্প ব্যবস্থা করতে গভীর নলকূপ বসানোর কাজ শুরু করা হলেও তা সমস্যা মেটাতে পর্যাপ্ত নয়। কংগ্রেস পুরবোর্ডে থাকার সময় ফুলবাড়িতে দিঘি খননের কথাও ভেবেছিল।