উদয়ন গুহ। ফাইল চিত্র।
গত পুরভোটে বামেরা পেয়েছিল ১৩টি আসন। তৃণমূল মাত্র তিনটি আসন। সংরক্ষণের গেরোয় এবারের ভোটে তৃণমূলের তিন কাউন্সিলরের কেউই নিজের আসনে দাঁড়াতে পারছেন না। আর বাম থেকে তৃণমূলে আসা কাউন্সিলরদের মধ্যে নিজের ওয়ার্ডে ভোটে দাঁড়াতে পারছেন না পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান শুভময় চক্রবর্তী ও জয়দীপ ঘোষ। নির্বাচনে দিনহাটা পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে সংরক্ষিত হয়েছে ৭টি ওয়ার্ড। এগুলির মধ্যে ৫টি ওয়ার্ড সাধারণ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। তফসিলি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ৬ নম্বর এবং তফসিলি সাধারণের জন্য সংরক্ষিত ১৪ নম্বর ওয়ার্ড।
ফলে এবার তৃণমূল কাদের প্রার্থী করবে তা নিয়ে দলেই শুরু হয়েছে গুঞ্জন। বিভিন্ন আসনে একাধিক দাবিদার রয়েছেন। পৃথক ভাবে এই দাবিদাররা প্রত্যেকেই নিজের মতো করে এলাকায় দলের হয়ে প্রচার শুরু করেছেন। পুরপ্রধান বিধায়ক উদয়ন গুহ গত নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। এবার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডটির কোন পরিবর্তন না হওয়ায় উদয়ন তাঁর পুরনো ওয়ার্ডেই দাঁড়াবেন, না কি অন্য কোনও ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। উদয়ন অবশ্য জানিয়েছেন, দল তাঁকে প্রার্থী করলে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। গত লোকসভা নির্বাচনে এই পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টিতেই তৃণমূল প্রার্থীকে পিছনে ফেলে দেয় বিজেপি। এবারের পুরভোটে বিজেপি সেই ভোট ধরে রাখতে মাঠে নেমে পড়েছে। দলের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে নির্বাচনী কার্যালয় খুলেছেন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। অন্যদিকে, শহরে বাড়ি বাড়ি জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন উদয়ন। বাম-কংগ্রেস জোটপ্রার্থী দিলেও এখানে মূল টক্কর হচ্ছে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের। পুরবোর্ড দখল করতে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছে বিজেপি। এমনও শোনা যাচ্ছে, নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে যাঁরা ইতিমধ্যে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থেকেও প্রার্থী হতে পারবেন না, সেই বিক্ষুব্ধদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে বিজেপি।
সাংসদ নিশীথ জানান, তাঁরা পুরসভার নানা দুর্নীতিকে সামনে রেখেই লড়াইয়ে নামছেন। পুরসভার বিভিন্ন দুর্নীতির পাশাপাশি ‘হাউস ফর অল’ প্রকল্পে পুর কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলেছেন বলে তাঁর অভিযোগ। তাঁর বক্তব্য, শান্তিপূর্ণ ভোট হলে তৃণমূলকে দিনহাটায় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
পুরপ্রধান-বিধায়ক উদয়ন বলেন, ‘‘এনআরসি ও সিএএ নিয়ে বিজেপি কোণঠাসা। তাই পুরসভার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে ওরা, যার কোনও ভিত্তিই নেই। মানুষ ব্যালটে তাদের জবাব দেবে। ‘হাউস ফর অল’ প্রকল্প নিয়ে পুরবাসীর কাছে ইতিপূর্বেই বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।’’ সব মিলিয়ে ভোটের দিন এখনও ঘোষণা না হলেও নিশীথ বনাম উদয়নের লড়াই ক্রমেই জমজমাট হয়ে উঠছে ।