—ফাইল চিত্র।
স্বামী নেই। চেয়েচিন্তে ১৫ বছর আগে উত্তরপ্রদেশে মেয়ে চম্পার বিয়ে দিয়েছিলেন পুরি দাস। পরিচারিকার কাজ করে কোনও রকমে নিজের ভরণপোষণ করেন। মাঝেমধ্যে ১০০ দিনের প্রকল্পে মাটি কাটারও কাজ করেন। প্রায় ১০ বছর আগে শেষবার মেয়ে-জামাই বাড়িতে এসেছিলেন। তাই মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনিদের দেখতে ইচ্ছে করছে বলে তাঁদের আসার জন্য জেদ ধরেছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরি। দোলের আগে তাই সপরিবারে উত্তরপ্রদেশের কাটরাবাজার থেকে অনিল শুক্লা আসেন শ্বশুরবাড়িতে, মালদহের চাঁচলের কেন্দুয়ায়। সঙ্গে স্ত্রী চম্পা ছাড়াও পাঁচ ছেলেমেয়ে। পুরির ছোট মেয়ে মায়ার বিয়ে হয়েছে জেলারই বৈষ্ণবনগরে। দীর্ঘদিন বাদে দিদি আসছেন জেনে স্বামী বাবলু ও দুই মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে হাজির হন মায়াও। সকলেই ভেবেছিলেন এতদিন বাদে এসেছেন, আরও ক’টা দিন কাটিয়ে ফিরে যাবেন। কিন্তু এরমধ্যেই আচমকা লকডাউন। বন্ধ ফেরার পথ। এ দিকে বন্ধ কাজকর্মও। মেয়ে-জামাইয়ের আতিথেয়তার জন্য যেটুকু সঞ্চয় করেছিলেন তাও ফুরিয়েছে। এখন কী ভাবে সবার চলবে তা নিয়েই চিন্তায় প্রৌঢ়া।
একই অবস্থা কেন্দুয়ার মংলু দাসেরও। তাঁর বাড়িতেও উত্তরপ্রদেশ থেকে এসে আটকে পড়েছেন ছয় আত্মীয়। বেতের কুলো বেঁধে একেই সংসার চালানো দায়। তারপর আত্মীয়দের নিয়ে বিপাকে পড়ে শেষে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন তাঁরা।
পুরি ও মংলু দু’জনেই জানালেন, এতদিন রেশনের চাল, জমানো টাকা সব দিয়ে কোনও রকমে চলছিল, কিন্তু এখন আর কোনও উপায় না থাকাতেই তাঁরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন।
চাঁচল ১ ব্লকের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিষয়টি জানার পরই পঞ্চায়েতকে সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে।’’
প্রশাসন জানায়, খরবা পঞ্চায়েতের কেন্দুয়ায় দু’টি পরিবারে ওই ১৭ জন আত্মীয় এসে আটকে গিয়েছেন। দু’টি পরিবারই হতদরিদ্র। ভাঙাচোরা ঘরদোর। নিজেদের খাবার জোগাড় করতেই তাঁদের হিমসিম খেতে হয়। তারপরও দীর্ঘদিন বাদে মামাবাড়িতে এসে হেসে খেলেই দিন কাটছিল মিশা, মধু, রিয়া, অজয়, সুরভী, সুরমিতা, লক্ষ্ণীদের। কিন্তু ছন্দপতন ঘটাল লকডাউন। প্রথমে লকডাউন শুরু হতেই বাড়ি থেকে বের হওয়ায় পদেপদে বাধা। তারপর এখন কার্যত একবেলা খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে। একই ভাবে পেশায় দিনমজুর মংলু দাসের বাড়িতে উত্তরপ্রদেশের দাময় থেকে আটকে পড়েছেন ছয় আত্মীয়। তাঁদের অবস্থা দেখে স্থানীয় হাজি আব্দুল গনি ও অচিন্ত্য ঘোষ কিছু খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। কিন্তু তাও ফুরিয়েছে।
এ ভাবে আটকে পড়ে সমস্যায় পুরির দুই জামাই এবং মংলুর আত্মীয়রাও। তাঁরা জানালেন, কাজ করার উপায় থাকলে তা করতেন। কিন্তু এখন তো সেটাও করা যাবে না।