চন্দন সাহা
বিবিডি মোড় এলাকায় ছোট চায়ের দোকানের উপর আমার সংসার। বহু দিন ধরে। এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা বন্ধে দোকান বন্ধ রেখেছি। কিন্তু এক দিনের বন্ধকে ছুটি মনে করে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কাটাতাম। কখনও একটানা দোকান করার পরে হাঁপিয়ে উঠলে, কবে ফের বন্ধ হবে সেই নিয়ে দোকানের ক্রেতাদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করতাম।
এখন লকডাউনের জেরে দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দোকান বন্ধ। বাড়িতে যতটা আর্থিক সঞ্চয় করেছিলাম, তা প্রায় শেষের পথে। আর কয়েক দিন লকডাউন চললে ব্যাঙ্কে সারাজীবনের সামান্য সঞ্চয়ের টাকা তুলে সংসার চালাতে হবে।
আমার স্ত্রী গৃহবধূ। ও কোনও পেশার সঙ্গে যুক্ত নয়। আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এক ছেলে নবম শ্রেণিতে, আর এক ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। একমাত্র মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। চায়ের দোকানের আয় থেকে সংসার চালানোর খরচের পাশাপাশি ওদের পড়াশোনার বই, খাতা, পেন সহ নানা সামগ্রীর ও প্রাইভেট টিউশনের খরচ বহন করতে হয়। প্রতি মাসে পরিবারের লোকেদের চিকিৎসা ও ওষুধ কেনার জন্যও অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। লকডাউন চলতে থাকলে কী ভাবে ও কোথা থেকে এ সব খরচ জোগাড় হবে, তার চিন্তায় রাতে ঠিক মতো ঘুমোতে পারছি না। বিকল্প আয়ের রাস্তা খুঁজতে লকডাউন চলাকালীন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে আনাজ ও মাছ বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে সব সামগ্রী কেনার মতোও পুঁজি নেই। তা ছাড়া সে সব বহন করার জন্য আমার নিজের ভ্যান বা টোটো নেই। সেগুলি ভাড়া করতে গেলেও প্রতিদিন প্রায় দু’শো টাকার প্রয়োজন।
এখনও পর্যন্ত আমার ও পরিবারের লোকেদের নাম দারিদ্র্যসীমার রেশনকার্ডের তালিকায় নথিভুক্ত হয়নি। কয়েক মাস আগে পরিবারের সকলে ডিজিটাল রেশনকার্ডের জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু এখনও সেই কার্ড হাতে পাইনি। কোনও রাজনৈতিক দল বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা এখনও বাড়িতে এসে ত্রাণ বা খাদ্যসামগ্রী দেয়নি। তবে লকডাউনের জেরে সমাজ করোনাভাইরাস মুক্ত হলে আমার ও আমার পরিবারের কষ্ট সার্থক হবে।