প্রতীকী ছবি
হাতে ক্যালকুলেটর। হিসেব কষছেন, আজ কত ট্রিপে কত খরচ। জিজ্ঞাসা করলে বলছেন, ‘‘রোজই তো রাত ফুরোলে দাম বাড়ছে ডিজেলের। তাই হিসেব করতেই হচ্ছে।’’ তা হলে কি ক্ষতির হিসেব কষছেন? জবাব না দিয়ে ক্যালকুলেটরে মন দিলেন এনবিএসটিসি-র ওই আধিকারিক। পাশ থেকে আর এক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘রোজ সকালে উঠে দেখা যাচ্ছে, ডিজেলের দাম বেড়ে গিয়েছে। পেট্রলকে ছাপিয়ে গিয়েছে। লোকসান হবে না!’’
এই হিসেব কষে যাওয়াই শুধু কোচবিহারে নয়, আলিপুরদুয়ার বা জলপাইগুড়িতেও একই ভাবে খাতা-কলম বা ক্যালকুলেটর চলছে আধিকারিকদের হাতে। কত কিলোমিটার বাস চলল, কত যাত্রী হল, তেলের দামের বর্তমান হারের সঙ্গে আগের দামের ফারাকটা কত— সে সব নিয়ে রোজ বসতে হচ্ছে তাঁদের। খরচের বোঝা যত বাড়ে, উদ্বেগও তত বাড়ে। ওই আধিকারিকদের এক জনের কথায়, “জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ মাসে প্রায় ৪০ লাখ টাকা বাড়তি খরচের প্রাথমিক হিসেব করেছিলাম। এক মাসের মধ্যে সেই খরচ আরও দু’লাখ টাকা বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।’’
নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, কর্মীদের বেতন বাবদ রাজ্য সরকারের তরফে ভর্তুকির টাকা মেলে। তবে দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি বা আনুষঙ্গিক অন্য খরচ টিকিট বিক্রির মতো আয় থেকেই মেটান হচ্ছিল। করোনা পরিস্থিতি, লকডাউন আবহে প্রথমে বাস পরিষেবা বন্ধ থাকা, পরে বাস চললেও যাত্রী সংখ্যা বহু রুটে আশানুরূপ না হওয়ায় সমস্যা বাড়তে থাকে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে তেলের আকাশছোঁয়া দাম। এ সবের ফলে আর্থিক ক্ষতি যে হচ্ছে, সেটা এনবিএসটিসি-র কর্তারা অনেকেই মেনে নিচ্ছেন। নিগমের চেয়ারম্যান অপূর্ব সরকার অবশ্য বলেন, “যতই দাম বাড়ুক, আর্থিক ক্ষতি হোক, পরিষেবা বিঘ্নিত হবে না। রাজ্য সরকার ও পরিবহণ দফতর আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করছে।” মঙ্গলবার নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সন্দীপ দত্ত বলেন, “তেলের দাম যত বাড়ছে, সেই হারে খরচও বাড়ছে। ফলে একটা সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।” এ সব দেখে অনেকেই বলছেন, একে করোনায় রক্ষে নেই, দোসর জ্বালানির জলুনি!