বিভ্রান্ত: ডিজিটাল কার্ড নেই, পুরনো কার্ডে মিলছে না রেশন। ইংরেজবাজারের ব্লক অফিসে লাইনে দাঁড়িয়ে আরমানি বিবির মতো অনেকেই। নিজস্ব চিত্র
লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন স্বামী, দুই ছেলে। বাড়িতে ‘বাড়ন্ত’ হয়ে উঠেছে চালও। এদিকে, ডিজিট্যাল কার্ড না থাকায় মিলছে না বিনামূল্যের রেশন। রোজা করেও দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে ব্লক অফিসে হাজির হন ইংরেজবাজারের বাগবাড়ির বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আরমানি বিবি। সকাল সাতটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত রোদের মধ্যে ব্লক অফিসে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। বলেন, “রোজা করেও দীর্ঘ পথ হেঁটে এসেছি। টোটোয় করে আসার মতো পয়সা নেই। বাড়িতে দুবেলা দুমুঠো খাওয়ারই টাকা নেই। পুরনো কার্ড দিয়ে রেশনও মিলছে না। কী খেয়ে বাঁচব বলতে পারেন?’’
শুধু আরমানি বিবিই নন, এদিন সকাল থেকেই পুরনো রেশন কার্ড হাতে নিয়ে ইংরেজবাজার ব্লক অফিসে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন শয়ে শয়ে মহিলা-পুরুষ। একই ছবি দেখা যায় ইংরেজবাজার শহরের রথবাড়িতে খাদ্য সরবরাহ দফতর, মালদহ জেলা প্রশাসনিক ভবনেও। সকাল থেকে সরকারি দফতরগুলিতে ভিড় উপচে পড়ায় উধাও হয়ে যায় সামাজিক দূরত্ব। পুলিশ, প্রশাসনের কর্তারা গিয়ে ভিড় সামাল দেন। কেন ভিড় জমাচ্ছেন? ইংরেজবাজারের নরহাট্টার বুধিয়ার বাসিন্দা তাজকেরা বিবি বলেন, “ডিজিট্যাল রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আবেদনপত্রের রশিদও রয়েছে। রেশনে পুরনো কার্ডে কোনও খাদ্য সামগ্রী দিচ্ছে না। অথচ, সরকার থেকে বলা হচ্ছে পুরনো কার্ডেও রেশন মিলবে। কিন্তু রেশনের দোকানে গেলে ডিলারেরা স্পষ্ট না করে দিচ্ছেন।’’
লকডাউনে রেশনের চালই ভরসা বলে জানিয়েছেন ইংরেজবাজারের রাজনগর গ্রামের বাসিন্দা দিলরোশন বিবি। তিনি বলেন, “রেশনে কার্ড পিছু পাঁচ থেকে সাত কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে। স্বামী, ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার পাঁচটি পুরনো কার্ড রয়েছে। এমন অবস্থায় কমপক্ষে আমার ২৫ কেজি চাল পাওয়ার কথা। এই চাল পেলে কমপক্ষে ১৫ দিন চলে যাবে। পুরনো কার্ড থাকায় সেই সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।” রেশন ডিলার এবং খাদ্য সরবরাহ দফতরের একাংশের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। অভিযোগ উঠেছে গ্রাহকদের হয়রানি করার। অন্ত্যোদয়, রাষ্ট্রীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনা ১, ২— এমনই একাধিক ধরনের কার্ড রয়েছে। কোন কার্ডে কী ধরনের খাদ্য সামগ্রী মিলবে, তা পরিস্কার করে জানানো হচ্ছে না। তাতেই কারচুপি চলছে বলে অভিযোগ। যদিও ডিলারদের দাবি, পুরনো রেশন কার্ডে খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কোনও নির্দেশিকা এখনও মিলেনি। যার জন্য বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিজিট্যাল রেশন কার্ড না থাকলে গ্রাহকেরা পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে আবেদন করবেন। প্রধান ব্লক অফিসে সেই নামের তালিকা পাঠালে আবেদনকারীকে মাসে পরিবার পিছু ১২ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। মালদহের মহকুমাশাসক (সদর) সুরেশচন্দ্র রানো বলেন, “রেশন যাতে সকলে পায় তা আমরা খতিয়ে দেখছি। পুরনো, নতুন কার্ডের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” পশ্চিমবঙ্গ রেশন ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের মালদহ শাখার সভাপতি অসিত সাহা বলেন, ‘‘পুরনো কার্ডে রেশন বিলির কোনও নির্দেশিকা আমরা পায়নি। যাঁদের ডিজিট্যাল রেশন কার্ড নেই এবং কুপনও পাননি, তাঁদের প্রশাসনের তরফে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফলে গ্রাহকদের রেশন দোকানে হয়রানির অভিযোগ ঠিক নয়।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)