চাঁচলের সিহিপুরে মৃত বুধুয়া শেখের শোকার্ত পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র
বাড়িতে স্ত্রী, তিন ছেলেমেয়ে। দিনমজুরির আয়েই চলত সংসার। কিন্তু লকডাউন শুরুর পরে বন্ধ দিনমজুরি। ঘরে সামান্য যা কিছু মজুত ছিল দু’সপ্তাহে তা ফুরিয়েছে। কী ভাবে সংসার চলবে তা নিয়ে বাড়ির লোকজনের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের কাছেও চিন্তার কথা শুনিয়েছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে আচমকা নিখোঁজ হয়ে যান।
রবিবার সকালে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে হাতিন্দা এলাকায় মাঠের একটি আমগাছ থেকে উদ্ধার হল ওই দিনমজুরের ঝুলন্ত দেহ। মালদহের চাঁচলের সিহিপুর এলাকায়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম বুধুয়া শেখ (৫৪)। চাঁচলের আইসি সুকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ওঁর হৃদরোগেরও সমস্যা ছিল বলে জানতে পেরেছি। ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত চলছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্ত্রী নুরি বিবি, তিন নাবালক ছেলেমেয়ে রয়েছে বুধুয়ার। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। বছরখানেক আগে তার হৃদরোগের সমস্যা দেখা দেয়। সে জন্য নিয়মিত ওষুধও খেতে হত। তার মধ্যেও যা আয় হত তা দিয়ে দু’মুঠো খেয়ে কোনও রকমে দিন কাটত। কিন্তু ২৩ মার্চ লকডাউন শুরু হতেই মাথায় হাত পড়ে বুধুয়ার। তার পরেও কয়েক দিন সকালে কাজের খোঁজে বের হন। কিন্তু কোথাও কাজ জোটেনি। মুষড়ে পড়েন বুধুয়া। স্ত্রী, প্রতিবেশীদের কাছে চিন্তার কথা জানিয়েছিলেন।
অলিহন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ওঁকে চিনতাম। লকডাউনের জেরে কী ভাবে সংসার চলবে, ওষুধের টাকা কোথায় পাবেন সেই চিন্তায় ছিলেন। তার জেরেই তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।’’
মৃতের আত্মীয় নাসিমা বিবি বলেন, ‘‘ঘরে খাবার ছিল না। রাতে চিন্তায় ঘুমোতেওপারতেন না। কয়েক দিন বাড়িতে উনুন জ্বলেনি। চেয়েচিন্তে শুকনো খাবার খেয়ে দিন কেটেছে। সেই হতাশা থেকেই ও আত্মহত্যার পথে বেছে নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’
স্ত্রী নুরি বলেন, ‘‘আশপাশের এলাকায় অনেককেই খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমরা কোনও সাহায্য পাইনি। ছেলেমেয়েকে নিয়ে এ বার কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’’