হাজির এক জন ছাত্রী। স্কুলের বারান্দায় চলছে ক্লাস। চাকুলিয়া জুনিয়র গার্লস হাইস্কুলে। নিজস্ব চিত্র
২০২১ সালে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ২৪ জন। গত বছর তা কমে দাঁড়ায় ২০ জনে। এ বছর আরও কমে সে সংখ্যা ১২ জন। চলতি শিক্ষাবর্ষে কোনও দিন দু’জন, কোনও দিন আবার তিন জনের বেশি ছাত্রী স্কুলে আসছে না। এই ঘটনা উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর-২ ব্লকের চাকুলিয়া জুনিয়র গার্লস হাই স্কুলের। ফলে, শিক্ষিকারা ক্লাসরুমের বদলে বারান্দায় চেয়ারে বসিয়ে এখন ছাত্রীদের ক্লাস নেন। মিড-ডে মিলের রান্নাও হয় না। ওই স্কুলের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘দু’-তিন জন ছাত্রীর জন্য মিড-ডে মিল রান্না করা হচ্ছে না। তবে মিড-ডে মিলে কেক, বিস্কুট, ফল দেওয়া হয়।” রায়গঞ্জ পুর এলাকার সৎসঙ্গ জুনিয়র বয়েজ় স্কুলেরও একই দশা। সেখানে ২০২১ সালে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ২৫ জন পড়ুয়া থাকলেও, এ বছর তা কমে হয়েছে ২২ জন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “আশপাশের একাধিক হাই স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। তাই অনেক চেষ্টা করেও পড়ুয়া ধরে রাখা যাচ্ছে না।”
রাজ্য শিক্ষা দফতরের নির্দেশে সম্প্রতি ৩০ জনেরও কম পড়ুয়া রয়েছে এমন স্কুলে উত্তর দিনাজপুর জেলায় সমীক্ষা হয়েছে। জেলার ন’টি ব্লকে প্রাথমিক ও জুনিয়র হাই স্কুল মিলিয়ে এমন ৭৩টি সরকারি স্কুলকে চিহ্নিত করেছে জেলা শিক্ষা দফতর। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কেনও ওই ৭৩টি স্কুলের পড়ুয়া কমেছে, সে বিষয়ে জেলা শিক্ষা দফতরের কাছে রিপোর্টও তলব করেছে রাজ্য শিক্ষা দফতর।
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক দুলাল সরকার বলেন, “স্কুলগুলির পড়ুয়া, শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের অন্য স্কুলে পাঠিয়ে স্কুলগুলি তুলে দেওয়া হবে কি না, তা শিক্ষা দফতর চূড়ান্ত করবে। আমরা রিপোর্ট রাজ্য শিক্ষা দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
জেলা শিক্ষা দফতরের কর্তাদের দাবি, পঠনপাঠনের মান কমে যাওয়া, স্কুলের বেহাল পরিকাঠামো, অভিভাবকদের একাংশের সরকারি স্কুলের উপর ভরসা হারানো, আশপাশে বিভিন্ন ‘নামী’ ইংরেজি মাধ্যম বেসরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়ানোর চাহিদা, এমন নানা কারণে গত কয়েক বছর ধরে জেলার ওই ৭৩টি স্কুলে ধীরে ধীরে পড়ুয়ার সংখ্যা কমেছে।