শুক্রবার সকালে শিলাবৃষ্টির জেরে শিলিগুড়ির রাস্তা ঢেকে গিয়েছে বরফে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
রোজ অল্প অল্প করে শীত পড়ছিল, শুক্রবার সকালে এর সঙ্গে আধঘণ্টা ধরে টানা শিলাবৃষ্টিতে ঠান্ডায় জেরবার হল শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন এলাকা। বছরের শীতলতম দিনের তাপমাত্রা অনুভব করলেন শহরবাসী। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুসারে, এ দিন শিলিগুড়ির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা ১১টার শিলাবৃষ্টির পর সন্ধ্যা থেকে ঠান্ডা আরও জাঁকিয়ে বসে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে আবহাওয়ার পরিবর্তন তো খুব একটা হবেই না, উল্টে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তেমনি, নতুন বছরের গোড়াতেই দার্জিলিং এবং কালিম্পঙের বিস্তীর্ণ এলাকায় টানা তুষারপাত হতে পারে। উৎসবের মেজাজের সঙ্গে কনকনে ঠান্ডায় জমজমাট দার্জিলিং জেলা।
এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ টানা বজ্র বিদ্যুতের ঝলকানি শুরু হয়। রোদ মেঘের আড়ালে চলে যেতেই প্রথম ঝমঝমিয়ে নামে বৃষ্টি। মিনিট দশকের মধ্যে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। শিলিগুড়ি শহর, মহকুমা এবং সংলগ্ন এলাকা শিলের চাদরে মুড়ে যায়। বরফ পড়া দেখে অনেকেই আনন্দে রাস্তায় নেমে পড়েন। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াঙের বিভিন্নপ্রান্তেও শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। এমনকি, টয়ট্রেনের লাইনও ঢেকে যায় সাদা শিলায়।
যদিও শিলাবৃষ্টিকে অনেকেই তুষারপাত বলে চাউর করেন। বিশেষ করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলি ভরে যায় সেই সব ছবিতে। অনেকেই পাহাড় এবং সমতলের শিলা ঢাকা ছবি পোস্ট করে তাকে সুইৎজারল্যান্ডের সঙ্গে তুলনাও করেন।
তবে আবহাওয়া দফতর থেকে জানানো হয়, তুষারপাতের জন্য দার্জিলিং, কালিম্পংকে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে সিকিমের বিভিন্ন প্রান্তে টানা তুষারপাত চলছে। লাচেন, লাচুং, ছাঙু লেক বরফে ঢেকেছে। এর মধ্যে বহু পর্যটক দার্জিলিং, কালিম্পং এবং গ্যাংটকে ভিড় জমানো শুরু করেন। দুপুর ১২টার পর শিলিগুড়িতে ঘণ্টা দু’য়েক রোদের ঝলক মিললেও ঠান্ডা কমেনি। বরং রাত যত বেড়েছে ঠান্ডা ততই বেড়ে চলেছে।
আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের আকাশে প্রবল ঘূর্ণাবর্ত তৈরির জন্য সিকিম এবং উত্তরবঙ্গে আবহাওয়া হঠাৎ করে পরিবর্তন হয়েছে। এর জেরেই প্রবল শিলাবৃষ্টি হয়েছে এই অঞ্চলে। তবে এই অবস্থান ২৪ ঘণ্টার বেশি থাকবে না। কিন্তু তার পরেই শুরু হবে ফের নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টি এবং তুষারপাত। সেই সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে নামবে তাপমাত্রার পারদ। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘বর্ষবরণের আগে সিকিম-সহ এই অঞ্চলের পুরো আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে। ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন শুধুমাত্র তুষারপাতের অপেক্ষা। শিলিগুড়িও বছরের শীতলতম দিন অনুভব করে নিয়েছে।’’
শিলাবৃষ্টিতে অবশ্য আধঘণ্টা শিলিগুড়ির জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। হিলকার্ট রোড থেকে সেবক রোড, দুই মাইল, বর্ধমান রোড, স্টেশন ফিডার রোড, মাটিগাড়া, বাগডোগরা, নকশালবাড়িতে দোকানপাট খুললেও বেলা পর্যন্ত লোকজন খুবই কম ছিল। গাড়ি, অটো, লোকাল বাস রাস্তায় ধারে দাঁড়িয়ে পড়ে। শিলাবৃষ্টির সময় অনেকেই ছাতা মাথায় দিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। বরফ কুড়িয়ে জড়ো করা চলে। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে পাহাড়েও। ম্যাল চৌরাস্তায় দুপুর থেকে ঠান্ডা উপেক্ষা করে পর্যটকদের ঘুরতে দেখা গিয়েছে।