প্রশ্ন: জলপাইগুরি ব্লক অফিসে মনোনয়ন তুলতে আসা এক জনকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ। —নিজস্ব চিত্র।
মনোনয়ন তুলবেন কেন?
অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রার্থী প্রমীলা রায়ের উত্তর, “শরীর ভাল না।”
ভোটে দাঁড়াতে চাইছেন না কেন?
অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রার্থী মামণি রায়ের উত্তর, “শরীর ভাল যাচ্ছে না।”
ভোটে লড়বেন না কেন?
পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী আইনুল ইসলামের উত্তর, “শরীর খারাপ।”
জলপাইগুড়ি সদর ব্লক অফিসে ঢোকার মুখে ব্যারিকেডে পুলিশ দাঁড়িয়ে। মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে আসা বিরোধী প্রার্থীদের দাঁড় করিয়ে পুলিশ জানতে চাইছে, তাঁরা স্বেচ্ছায় মনোনয়ন তুলতে এসেছেন কি না, কেউ ভয় দেখিয়েছে কি না এবং কেন মনোনয়ন তুলছেন। এই প্রশ্নোত্তরের ভিডিয়ো (সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) তুলেছে পুলিশ। বিজেপি, বাম, কংগ্রেসের বেশির ভাগ প্রার্থী পুলিশের তোলা ভিডিয়োয় ভোটে না লড়ার কারণ হিসাবে জানালেন, “শরীর খারাপ।” যা শুনে, কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মীর মন্তব্য, “এই ক’দিনে শুধু বেছে বেছে বিরোধী প্রার্থীরাই অসুস্থ হয়ে পড়লেন!”
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন, মঙ্গলবার এমনই দেখা গেল, জলপাইগুড়ি সদর ব্লক-সহ একাধিক ব্লকের মনোনয়ন প্রত্যাহারে। সদর ব্লকেই শেষ দিনে মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছে পঞ্চাশটিরও বেশি। যার মধ্যে তৃণমূলের ‘গোঁজ’ প্রার্থীও রয়েছেন। জলপাইগুড়ির শহরের পান্ডাপাড়ার একটি ভবনে বিজেপির প্রায় পঁয়ত্রিশ জন কর্মী-সমর্থককে রাখা হয়েছিল দিন কয়েক ধরে। বিজেপির দাবি, ক্রমাগত হুমকি, চাপের হাত থেকে বাঁচতে প্রার্থীদের লিখিয়ে রাখা হয়েছিল। এ দিন দুপুরেও পাতকাটার ডোডালিয়াতে বিজেপি প্রার্থীর বাড়িতে দুষ্কৃতীরা জড়ো হয় বলে অভিযোগ। প্রার্থীকে অপহরণ করার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। পাহাড়পুরে সিপিএম প্রার্থীর এক আত্মীয়কে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, “মনোনয়ন তোলার জন্য সর্বত্র হুমকি, মারধর চলেছে। আমাদের প্রার্থী-কর্মীরা অনেক জায়গায় প্রতিরোধ করেছেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য বলেন, “মানুষ উৎসবের মেজাজে পঞ্চায়েত ভোট চাইছেন আর তৃণমূল মানুষেরই টুঁটি চেপে ধরছে।” জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান খগেশ্বর রায়ের দাবি, সব অভিযোগ ভিত্তিহীন, ভোটে জিততে পারবে না ধরে নিয়েই বিরোধীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছে। পাহাড়পুরের বালাপাড়ার সিপিএম প্রার্থী আইনুল ইসলামকে এ দিন মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে নিয়ে এসেছিলেন এলাকার তৃণমূল প্রার্থী। মনোনয়নের গেট পর্যন্ত আসার পরে পুলিশ সিপিএম প্রার্থীকে মনোনয়ন তোলার কারণ জানতে চেয়েছিলেন। সে সময়ে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থীও। পুলিশ তৃণমূল প্রার্থীকে দূরে সরে যেতে বলেন। তার পরে ফের কারণ জানতে চাওয়া হয়। পুলিশ অফিসার জানতে চান, “কেউ ভয় দেখিয়েছে?”
উত্তরে আইনুল দু’দিকে মাথা নাড়েন। বেশ কয়েক বার মনোনয়ন তোলার কারণ জানতে চাওয়ার পরে উত্তর শুধু দু’টি শব্দ বলেন, “শরীর খারাপ।”