অনীত থাপা। ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে রীতিমতো ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েই পাহাড়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল মহাজোট। রাজ্যের শাসক তৃণমূল এবং পাহাড়ে জিটিএ-তে ক্ষমতাসীন অনীত থাপা দলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ের ডাক দিয়ে এক ছাতার তলায় এসেছিল বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, অজয় এডওয়ার্ডের হামরো এবং বিজেপি। সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি ছোট ছোট দল। তার পরেও গোটা মনোনয়ন পর্ব জুড়ে প্রায় সর্বত্রই ‘সমন্বয়ের অভাবের’ দেখা গেল! মহাজোট প্রার্থী দিতে না পারায় ভোটের আগেই পাহাড়ে ‘অর্ধশতক’ ছুঁয়ে ফেলল অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। শুধু তা-ই নয়, জোটের শর্ত ভঙ্গ করে অনেক আসনে একে অপরের বিরুদ্ধেই প্রার্থী দিয়ে দিল শরিক দলগুলি! এই পরিস্থিতিতে মহাজোটকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না অনীতেরা।
পাহাড়ে দ্বিস্তর পঞ্চায়েতের স্ক্রুটিনি ও মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্ব শেষ হতেই বদলে গিয়েছে সব হিসাব। ভোটের আগেই বড় ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছে জিটিএ-র শাসকদল। জিটিএ-র অধীনে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫০টি আসনে ও পঞ্চায়েত সমিতির ১০টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে তারা। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, কালিম্পং জেলার ১ ব্লকের ভালুখোপ ১, তিস্তা, গ্রাহামস্ হোমস, সিয়োকভির, সমলবং, নিমবঙ গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (বিজিপিএম)-র প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় এসেছে পেডং ব্লকের কাগে ও লিঙ্গসেকা এবং গরুবাথান ব্লকের তোদে তাংদা ও পোখরেবং গ্রাম পঞ্চায়েতেও। কার্শিয়াংয়ের তিনটি মহানদী, গয়াবাড়ি, সিটং পঞ্চায়েত সমিতির আসন, জোরবাংলো সুখিয়াপোখরির প্লাংডুং আসন, রঙ্গলি রঙ্গলিয়তের মানেদাঁড়া ও তাকদহ এবং পুলবাজার ব্লকের রেলিং, লোধামা ও নয়ানোর পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে বিজিপিএম। পাশাপাশি, কালিম্পং জেলার সুখভির পঞ্চায়েত সমিতির আসনেও জিতেছেন অনীতেরা। অন্য দিকে, দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াং ব্লকের সুকনা, গয়াবাড়ি, সেন্টমেরি, মহানদী ও সিটং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩টি আসন, জোরবাংলো-সুখিয়াপোখরি ব্লকের ধোতরে কালেজ ভ্যালে, পোখরেবং, ঘুম খাসমহল, প্লাঙডুঙ্গ ও গোরাবাড়ির ১০টি আসনে, মিরিকের ১টি আসনে, রঙলি রঙলিয়তের ৩টি আসনে ও দার্জিলিং পুলবাজার ব্লকের রঙ্গীত, ঝেপি, দাওয়াইপানি, শ্রিখোলা, দাঁড়াগাঁও, কাঞ্জালিয়া, রিম্বিক, রেলিং গোকে ও মজুয়া মিলিয়ে ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে বিজিপিএম প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন।
মহাজোট তৈরি হওয়ার সময় স্থির হয়েছিল, যে এলাকায় যে দলের সাংগঠনিক শক্তি বেশি, তারাই সেখানে প্রার্থী দেবে। বিজেপি বাদে (সর্বভারতীয় দল হওয়ার কারণে) বাকি সব দলই মহাজোটের নিজস্ব প্রতীকে লড়বেন। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা গেল না। আলাপ-আলোচনা করে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছিল। মিলেছিল নির্বাচনী প্রতীকও। কিন্তু প্রতিটি প্রার্থীই তাদের নিজেদের দলের প্রতীকেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, মহাজোটের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের দলের প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে নেমে গিয়েছেন হামরো প্রধান অজয়। তিনি বলছেন, ‘‘অনীতের দল আমার দলের লোকেদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করাতে কখনও হুমকি, আবার কখনও প্রলোভন দেখাচ্ছে। এ নিয়ে আমি রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছি৷ এর পর ভোটারদের হুমকি আর লোভ দেখিয়ে ভোট লুট করবে। বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে মহাজোট প্রার্থী দিতে পারেনি বলে অনীত থাপা লাফাচ্ছেন। কিন্তু তা হয়েছে শেষ মুহুর্তে স্ক্রুটিনির সময় নথির অভাবে। সেই কারণে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তবে এই জোট পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্যন্তই। বিজেপি আগে তাদের দেওয়া কথা রাখুক। তার পর লোকসভার জোট নিয়ে আমি ভাবব।’’
মহাজোটের শরিকদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে বলে দাবি করে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে অনীতের দল। দলের মুখপাত্র এসপি শর্মা বলেন, ‘‘বিরোধীদের এক ছাতার নীচে এসে দাঁড়াতে হচ্ছে৷ এতেই বোঝা যাচ্ছে, তাদের নিজদের দলের আর কোনও ক্ষমতা নেই। ওরা প্রার্থীই দিতে পারল না অধিকাংশ আসনে। এর থেকেই এই মহাজোটের শক্তি বোঝা যায়। ওদের নিজেদের মধ্যেই সমস্যার শেষ নেই। একই জায়গায় বিজেপি, অজয়, বিমল প্রার্থী দিচ্ছে৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর এই জোট যে থাকবে না, সেটা তো ওরাই বলছে৷ তা হলে সাধারণ মানুষ আর কী ভাবে বিশ্বাস করবে ওদের!’’
এ নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে নারাজ বিমলের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। জলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘এই বিষয় নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য নয়।’’ বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে জোটের জয় নিশ্চিত। তাঁর কথায়, ‘‘শেষ হাসি আমরাই হাসব। ওরা যে ক’টা আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছে, সেই ক’টাই থাকবে।’’ জোট শরিক জিএনএলএফ নেতা নীরজ জিম্বাও বলেন, ‘‘এটা সত্যি যে, অনীতের শিবির বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেক বেশি আসনে এগিয়ে রয়েছে। তবে আমরাও পিছিয়ে থাকব না।’’