Dam Construction at Atrayee

আত্রেয়ীতে বাঁধের কারণে জলস্তর নামার অভিযোগ

সেচ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরে, অবশ্য ‘লো ড্যাম’-এর জন্য জলের স্তর নামেনি বলে দাবি করছেন বালুরঘাটের পুরপ্রধান তৃণমূলের অশোক মিত্র।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৩ ০৯:১৫
Share:

জল-বন্দি: আত্রেয়ী নদীর বুকে ছোট বাঁধ। দু’দিকে জলের উচ্চতার ফারাক। বুধবার। ছবি: অমিত মোহান্ত

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় আত্রেয়ী নদীর ‘লো ড্যাম’ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। মূলত, শুখা মরসুমে সেচ, মৎস্য চাষের জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এই বাঁধের কারণে, বালুরঘাট শহরে নদী বাঁধের নিম্ন ধারায় (ডাউন স্ট্রিমে) চারটি ওয়ার্ডে জলের স্তর নামতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ তুলছেন পুর প্রতিনিধি ও নাগরিকেরা। যদিও তা মানতে নারাজ পুরসভা। জলসম্পদ অনুসন্ধান বিভাগের তরফে এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করে, তা পাঠানো হয়েছিল কলকাতায়। যদিও রিপোর্ট নিয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখছে দফতর। এ বিষয়ে দফতরের জেলা আধিকারিকেরা কোনও কথা বলবেন না বলে জানান। নতুন করে কমিটি গড়ে বাঁধের সমীক্ষার আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছে বালুরঘাটের একটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠন।

Advertisement

সেচ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরে, অবশ্য ‘লো ড্যাম’-এর জন্য জলের স্তর নামেনি বলে দাবি করছেন বালুরঘাটের পুরপ্রধান তৃণমূলের অশোক মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘জলের স্তর নেমে গিয়েছে বলে কেউ আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। কোথাও সমস্যা থাকলে, জল দেওয়া হবে।’’ সেচ দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, দু’মিটার উচ্চতার ওই বাঁধে, জল কিছুটা ধরে রেখে, ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, উজান (আপ স্ট্রিম) থেকে জল আসতে থাকলে, তা বাঁধের পাশে নির্মিত ‘স্লুস গেট’ দিয়ে ছাড়া হচ্ছে। তার ফলে, নদীতে সব সময়ই জল থাকছে। নদী থেকে নালা বা খাল কেটে জল কোথাও না সরিয়ে নিলে, নিম্ন ধারার দিকে জলের স্তর নামার কথা নয়।

বালুরঘাট পুরসভার ৪ নম্বর এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আত্রেয়ী নদীর দু’পারে। সেখানেই তৈরি হয়েছে ওই ‘লো ড্যাম’। ফলে, এই দুই ওয়ার্ড নিম্ন ধারা এলাকায় পড়ছে। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দাবি, এ বছর অনেক সময় পাম্প চালিয়েও জল উঠছে না। জল এলেও, তা অল্প আসছে। তাঁদের অভিযোগ, ‘লো ড্যাম’-এর কারণেই এটা হয়েছে। কারণ, এ বার শুখা মরসুমে নদীতে জল অন্য বারের থেকেও কম রয়েছে। বালুরঘাট পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের পুর প্রতিনিধি বিপ্লব খাঁ বলেন, ‘‘এক হর্স পাওয়ারের পাম্প ছিল আমার বাড়িতে। এখন দেড় হর্স পাওয়ারের পাম্প বসিয়েও জল উঠছে না। বাঁধ তৈরির পরে, জল অনেক কম আসছে।’’

Advertisement

একই সমস্যার কথা জানালেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের পুর প্রতিনিধি তনুশ্রী মোহান্তের স্বামী পামীরকুমার দাস। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতেও পাম্পে জল ঠিক মতো উঠছে না। জলের স্তর নেমে গিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে।’’

‘লো ড্যাম’-এর জন্য জল নেমে যেতে পারে কি না, পরিবেশের প্রভাব সংক্রান্ত সে সমীক্ষা বাঁধ তৈরির আগে কি হয়েছিল? জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘আগে সমীক্ষা হয়েছে বলে জানা নেই।’’ সমীক্ষা ছাড়া, কী ভাবে জলের স্তর নামেনি বলে নিশ্চিত হচ্ছে পুরসভা? সে প্রশ্ন তুলেছেন দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।

বাঁধের সমীক্ষার দাবি তুলে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন একটি পরিবেশ সংগঠনের সম্পাদক তুহিনশুভ্র মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আগেই সমীক্ষার দাবি তুলেছিলাম। নদী সংলগ্ন এলাকাগুলিতে জলস্তরের সমীক্ষা করে মানুষের জন্য বিকল্প জলের ব্যবস্থা করা হোক।’’ নদী বাঁধের সব জায়গায় পুরসভার নলবাহিত জল যায় না বলে অভিযোগ তাঁর। পুরসভার তরফে পুর এলাকার সব জায়গায় জল দেওয়া হয় বলে দাবি করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement