— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কোথাও ভোট দেওয়ার ছবি ফোনে ভিডিয়ো করার অভিযোগ, কোথাও তৃণমূল-বিজেপি বচসা, কোথাও প্রার্থীর দাদার বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ, কোথাও অভিযোগ ‘বুথ জ্যাম’, ভয় দেখানো, ভোট দিতে বাধা দেওয়া এবং ছাপ্পা ভোটের। বুধবার রায়গঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের ছবি। বিজেপি এবং কংগ্রেসের প্রার্থীর দাবি, তৃণমূলের ‘প্রভাবে’ কেন্দ্রীয় বাহিনী ‘যথাযথ’ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। অভিযোগ নস্যাৎ করেছে তৃণমূল। প্রতিক্রিয়া জানতে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক সুরেন্দ্রকুমার মিনা বা রায়গঞ্জ বিধানসভার রিটার্নিং অফিসার কিংশুক মাইতিকে ফোনে পাওয়া যায়নি। মেসেজের জবাব মেলেনি।
রায়গঞ্জ শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাঞ্চনপল্লির জিএসএফপি স্কুলের বুথে এ দিন তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণীকে ভোট দেওয়ার সময় মোবাইলে ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) তোলার অভিযোগ উঠেছে এক মহিলার বিরুদ্ধে। বেবি মণ্ডল নামের ওই মহিলা সে ভিডিয়ো (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) বিদায়ী তৃণমূল পুর প্রতিনিধি তথা জেলা তৃণমূলের সহকারী সভাপতি অরিন্দম সরকারকে দেখান বলে দাবি।
বেবি বলেন, ‘‘আগে তৃণমূল করতাম। কিছু দিন আগে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরেছি। তৃণমূলকেই যে ভোট দিয়েছি, তা দলের নেতা-কর্মীদের বিশ্বাস করাতেই ভোট দেওয়ার ছবি তুলে অরিন্দমদাকে দেখিয়েছি।’’ যদিও অরিন্দমের দাবি, ওই মহিলাকে ভোট দেওয়ার ভিডিয়ো তুলতে বলা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘উনি অতি-উৎসাহী হয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।’’ কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারির পরেও কেউ কী ভাবে বুথে ফোন নিয়ে ঢুকতে পারেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন অরিন্দম। এ বিষয়ে বিজেপি প্রার্থী মানসকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমল নেতাদের ভয়ে রায়গঞ্জের বিভিন্ন বুথে ভোটারেরা পোশাকে ফোন লুকিয়ে বুথে ঢুকেছিলেন। ভোট দেওয়ার ছবি তুলে পরে তাঁরা তৃণমূল নেতাদের দেখানোর পাশাপাশি সমাজমাধ্যমেও দিয়েছেন।’’
তৃণমূলের কৃষ্ণ, বিজেপির মানস ও বাম-সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত সকাল থেকে শহর ও পঞ্চায়েতের বুথে-বুথে ঘুরেছেন। শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বীরনগরের বুথে তৃণমূলের বিদায়ী পুরপ্রতিনিধি তথা পুরসভার কো-অর্ডিনেটর কল্পিতা মজুমদার বুথে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করেন বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেন মোহিত। করোনেশন হাই স্কুলের বুথে কৃষ্ণের সম্পর্কিত দাদা প্রদীপ কল্যাণীর বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগও তোলেন মোহিত। কল্পিতা ও প্রদীপ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ছ’নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে বহিরাগতদের সরায় বলে দাবি। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ বিদ্যাভবনের বুথে মানসের সঙ্গে তৃণমূলের দুই বিদায়ী পুর প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ সাহা ও বিমলজ্যোতি সিংহের বচসা বাধে। পুলিশের সহযোগিতায় ওই দুই তৃণমূল নেতা ভোটারদের প্রভাবিত করছিলেন বলে অভিযোগ। অনিরুদ্ধ ও বিমলজ্যোতি মানসের বিরুদ্ধে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগ করেন।
চার নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রপল্লি দেশবন্ধু গার্লস হাই স্কুলের বুথ-এলাকায়, রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুলের সামনে, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে মানসকে দেখে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান দেন বলে খবর। খরমুজাঘাট এলাকায় মানসের গাড়ি অনুসরণ করার অভিযোগ ওঠে সাদা পোশাকের দুই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে। পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মানস বলেন, ‘‘রায়গঞ্জ শহর ও পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন বুথে পুলিশ ও প্রশাসনের মদতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ভোটারদের ভয় দেখিয়ে ভোট দিতে দেয়নি। একাধিক বুথে আমাদের পোলিং এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি। প্রতিবাদ করায় বিক্ষোভের মুখে পড়েছি।’’ প্রার্থীর ক্ষোভ, ‘‘মমতা-পুলিশ-প্রশাসন বাহিনীকে ‘মিসগাইড’ করে বহু বুথে তৃণমূলকে ভোট লুটের রাস্তা করে দিয়েছে।’’ মোহিত বলেন, ‘‘পুলিশের মদতে তৃণমূল কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কোণঠাসা করে ভোট লুট করেছে।’’ পুলিশ ও প্রশাসনের মদতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট লুটের অভিযোগ তুলে আজ, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে রায়গঞ্জ শহরের ঘড়ি মোড়ে রাজ্য সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। তবে কৃষ্ণের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘হারবে বুঝেই বিরোধীরা মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’’ এ দিন হেমতাবাদে দলীয় বৈঠক করে শিলিগুড়ি যাওয়ার পথে রায়গঞ্জে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘রায়গঞ্জে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী ও পুর-প্রতিনিধিরা ভোট লুট করেছেন। মানুষ ঠিক মতো ভোট দিতে পারলে, বিজেপি জিতবে।’’