মালদহের কালিয়াচকের রাজনগর মডেল গ্রামে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার কাণ্ডে ধৃত দুই ভাইয়ের বাড়ির সামনে বুধবারও গ্রামবাসীদের জটলা। ছবি: জয়ন্ত সেন।
বাড়ি থেকে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের অভিযোগে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরের মেধাবী ছাত্র ও তাঁর এক বড় ভাইকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। কিন্তু দুই ভাই এমন কাজে জড়িত থাকতে পারেন, তা বিশ্বাসই করতে চাইছেন না মালদহের কালিয়াচকের রাজনগর মডেল গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, ওই দুই ভাই-সহ পরিবারটি এলাকার নানা সামাজিক কাজে জড়িত। তাঁদের বাবা হাজি নেহারুল ইসলাম এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সভাপতি পদেও রয়েছেন। ওই পরিবারের পাশাপাশি, গ্রামবাসীদের একাংশ বুধবার দাবি করেন, কে বা কারা চক্রান্ত করে আগ্নেয়াস্ত্র-কাণ্ডে ওই দুই ভাই-সহ পরিবারকেই ফাঁসিয়ে দিয়েছে। এই ঘটনায় সিবিআই-তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসীদের একাংশ।
ধৃত দুই ভাই এখন পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে জেরায় ধৃত দু’জনেই ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সিআইডি অবশ্য জানিয়েছে, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয় এবং দুই ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে।’’
সোমবার গভীর রাতে সিআইডির একটি দল কালিয়াচক ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজনগর মডেল গ্রামে হাজি নেহারুলের বাড়িতে হানা দেয়। বাড়ির নির্মীয়মাণ দোতলার একটি ঘরের মেঝেয় পাতা তোশকের নীচ থেকে চারটে আগ্নেয়াস্ত্র ও চারট রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
ধৃতদের মধ্যে বড় জুবের আজম পাশের কালিয়াচক ২ ব্লকের রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাংলা সহায়তা কেন্দ্রের অস্থায়ী কর্মী। পরিবার সূত্রে খবর, ১৩ তারিখ গ্রামেরই এক পাত্রীর সঙ্গে জুবেরের বিয়ে হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান থাকায় ১৮ তারিখ পর্যন্ত বাড়িতে অনেক আত্মীয়স্বজনও ছিলেন। আর ২০ তারিখ রাতে ওই ঘটনায় পরিবার তো বটেই, নববধূও মুষড়ে পড়েছেন। ধৃত অন্য ভাই ফারুক আলম গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরে রসায়ন বিভাগের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, স্নাতক স্তরে ৮৯ শতাংশ নম্বর পাওয়ায় এ বারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ভর্তির মেধা তালিকায় প্রথমেই নাম ছিল তাঁর। পুজোর ছুটির আগে কয়েক দিন তিনি ক্লাসও করেছেন।
এ দিন দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, নেহারুলকে ঘিরে রয়েছেন গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা। স্থানীয় রুলেখা বিবি, নাসরিন বিবিরা বলেন, ‘‘ওই দুই ভাইকে আমরা ছোট থেকে দেখছি। লেখাপড়ায় ভাল হওয়ার পাশাপাশি, এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কাজে ওরা জড়িত। ওরা এই কাজে জড়িত, তা মানতে পারছি না। কেউ চক্রান্ত করে ওদের ফাঁসিয়েছে।’’ স্থানীয় মজিবুর রহমান, মহম্মদ মুস্তাক আলিরা দাবি করেন, এই ঘটনা ‘পরিকল্পিত চক্রান্ত’। ধৃতদের বাবা নেহারুলও বলেন, ‘‘কারও কোনও ক্ষতি করিনি। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে আমাদের ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’’ এক প্রতিবেশী মইনুল হক বলেন, ‘‘সিবিআই-তদন্ত করলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’
সিআইডির এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা বেশ কয়েক দিন ধরেই ওই পরিবারের উপর নজর রেখেছিলাম। পুলিশি তদন্তে সব স্পষ্ট হবে।’’