বিদ্যুৎস্পৃষ্ট: এই মাদি হাতিটিকে অবশ্য বাঁচানো যায়নি। নিজস্ব চিত্র
ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। আচমকা একাধিক হাতির চিৎকারে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল পূর্ব মাদারিহাটের শঙ্করপুর এলাকার বাসিন্দাদের। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই বাইরে বেরিয়ে তাঁরা দেখেন, একটি কাঁঠাল গাছের নীচে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ছটফট করছে একটি হাতি। আর তাকে বাঁচাতে তার দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আরও পাঁচ-ছ’টি হাতির দল। বিপদ যে আরও বাড়তে চলেছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি গ্রামবাসীদের। হাতির দলটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হাতির কাছে পৌঁছনোর আগেই তড়িঘড়ি বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন স্থানীয়েরা।
বন দফতর সূত্রের খবর, শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হাতিটি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। কিন্তু গ্রামবাসীদের তৎপরতায় প্রাণে বেঁচে যায় বাকি পাঁচ-ছ’টি হাতি। জলদাপাড়ার ডিএফও কুমার বিমল বলেন, “অন্ধকারে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও গ্রামবাসীরা বাকি হাতিগুলোকে যে ভাবে বাঁচিয়েছেন তা প্রশংসনীয়।” আর সেটা না হলে বুধবার ভোরে যে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন বন দফতরের কর্তারা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এ দিন ভোররাতে কুড়ি-পঁচিশটি হাতির দল জলদাপাড়ার জঙ্গল থেকে লোকালয়ে বেরিয়ে আসে। একটি চা বাগান পার করে হাতির দলটি পূর্ব মাদারিহাটের শঙ্করপুর এলাকায় ঢুকে পড়ে। সেখানে চার-পাঁচটি বাড়ির ক্ষতি করে হাতির দলটি। এরপর ফের জলদাপাড়ার জঙ্গলে ফেরার পথে একটি সুপুরি বাগানে ঢোকে হাতির দলটি। তাদের মধ্যে কুড়ি-বাইশ বছরের একটি মাদি হাতি কাছেই একটি কাঁঠাল গাছের সামনে গিয়ে কাঁঠাল খেতে শুরু করে। বন দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, সেই সময় বাকি হাতির দলটি একটি সুপুরি গাছ ভেঙে ফেলে। সেই গাছের আঘাতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়ে কাঁঠাল গাছের সামনে থাকা মাদি হাতির শরীরে গিয়ে পড়ে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাতিটি ছটফট করতে শুরু করে।
স্থানীয় খয়েরবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সুভাষ দাস বলেন, “হাতির চিৎকারে আমরা বাইরে বেরিয়ে আসি। তার পরে দেরি না করে ট্রান্সফর্মার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিই।”
খবর পেয়ে জলদাপাড়া উত্তর রেঞ্জের বনকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। বাকি হাতিদের জঙ্গলে ফেরাতে ততক্ষণে গ্রামবাসীরাও প্রবল চিৎকার শুরু করেন। হাতির দলটি জলদাপাড়ার জঙ্গলে ফিরে যায়। তবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হাতিটিকে অবশ্য আর বাঁচানো যায়নি।