কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত লক্ষ্মণ বর্মণের বাবা। শীতলখুচিতে। নিজস্ব চিত্র।
চারিদিকে শুধুই হাহাকার, কান্না, আর্তনাদ! কারও বয়স সতেরো, কেউ বা কুড়ি পেরিয়ে একুশে পা দিয়েছেন। গত রবিবার জল্পেশ মন্দিরে যাওয়ার জন্য তাঁদের হাসিমুখে গাড়িতে তুলে দিয়েছিলেন পরিজনেরা। সোমবার বিকেলেই চোখের জলে তাঁদের শেষ বিদায় জানালেন তাঁরা।
সোমবার গ্রামের অনেকের বাড়িতেই এ দিন হাঁড়ি চড়েনি। গ্রামে বেড়ে ওঠা ছেলেগুলিকে শেষ বারের মতো দেখতে ভোর থেকেই রাস্তায় অধীর অপেক্ষায় ছিলেন গ্রামবাসীরা। এ দিন দশ জনের দেহ নিয়ে আসা হয় মাথাভাঙা পুলিশ মর্গে। খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করেই কেউ টোটো, কেউ বাইকে হাজির হন মর্গের সামনে। ময়নাতদন্তের পরে, দুপুরে মর্গ থেকে দেহগুলি নিয়ে যাওয়া হয় যাঁর-যাঁর গ্রাম। এক জনের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় গোসাইরহাটে, দু’জনের শীতলখুচিতে ও বাকি সাত জনের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় গোলেনাওহাটি মিরাপাড়ায়। গ্রামের ছেলে শুভঙ্কর, স্বপন, বাদল, লক্ষ্ণণ, বিভাসদের কালো প্লাস্টিকে ঢাকা দেহ দেখে চোখের জল বাঁধ মানেনি গ্রামবাসীদের।
রবিবার দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে চোখের পাতা এক করতে পারেনি শীতলখুচি হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শুভঙ্কর বর্মণের পরিবার। মা অলকা বর্মণ বললেন, ‘‘মামার সঙ্গে জল্পেশ মন্দিরে যাওয়ার বায়না ধরেছিল ছেলে। এ ভাবে ছেলের নিথর দেহ ফিরবে, ভাবতে পারিনি!’’
এক প্রত্যক্ষদর্শী বিষ্ণু বর্মণ বলেন, ‘‘ওই গাড়িতেই সাউন্ড বক্সের উপরে বসেছিলাম। জেনারেটর চালিয়ে ডিজে বাজানো হচ্ছিল। রাত প্রায় বারোটা। হঠাৎ সব কাঁপতে থাকে। ভয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। জানতে পারি, অনেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন।’’
এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোক প্রকাশ করেন। তাঁর নির্দেশে আজ, মঙ্গলবার রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের শীতলখুচি আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান কোচবিহার জেলা তৃণমূল চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ। এ দিন বাড়ির পাশেই মৃতদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।