রোল, প্যাটিস, বার্গারের মতো ফাস্টফুডের রমরমা বাজারের মধ্যেও মালদহের গ্রামীণ মেলাগুলিতে এখনও টিকে রয়েছে গুড়কাঠি, চিনিকাঠি, ঝিল্লি, সেউ, মালপোয়ার মতো খাবার। দামও সাধ্যের মধ্যে। ৮০-১২০ টাকা প্রতি কিলো।
মেলা চত্বর বা রাস্তার একেবারেই পাশে তৈরি করা এ সব খাবার কতটা স্বাস্থ্যকর, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও মেলায় আসা মানুষজন কিন্তু এসব রসিয়েই খান। অনেকে আবার কিনে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে রেখে কয়েকদিন ধরে খান।
আর মেলায় মেলায় এ সবের দোকান দিয়েই বছরের ছমাস রোজগার করেন মালদহ ও মুর্শিদাবাদের অনেক ব্যবসায়ী. বর্তমানে মালদহ শহরের ফুলবাড়িতে ১৫ দিন ধরে চলা কার্তিক পুজোর মেলায় ওই খাবারের অন্তত ২৫-৩০টি দোকান রয়েছে।
কিন্তু অন্য বছরের তুলনায় এবার এই খাবারের বিক্রি কিন্তু ব্যবসায়ীদের মুখ বেজার করে দিয়েছে।
তার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা কিন্তু কাঠগড়ায় তুলেছেন মোদি সরকারের সেই নোট অচলের তত্ত্বকেই।
কী বলছেন তাঁরা! মালদহের কার্তিক মেলায় গুড়কাঠি, চিনিকাঠির পসরা নিয়ে বসেছেন মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের বাসিন্দা বাবলু সাহা।
তাঁর কথায়, প্রতি বছর ৬ মাস তাঁরা মেলায় মেলায় এই সব খাবারের দোকান করে থাকেন। এই রোজগার থেকেই চলে পাঁচ জনের বছর ভরের সংসার। দুর্গাপুজোয় জঙ্গিপুরের গদাইপুরের মেলা থেকে এবছরের কারবার শুরু করেছেন। তারপর একেএকে মহরমের মেলা, কালীপুজোর মেলা, জগদ্ধাত্রী পুজোর মেলায় দোকান দিয়েছেন. এখন রয়েছেন মালদহের কার্তিক পুজোর মেলায়। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিলকাণ্ড আমাদের পেটে কার্যত লাথি মেরে দিল। যে সময় এই মেলা শুরু হয়েছে তখন থেকেই টাকা নিয়ে মানুষের মধ্যে ডামাডোল শুরু হয়েছে। এখন কেউ ব্যাঙ্কে টাকা রাখতে বা কেউ টাকা তুলতেই দিনভর ব্যস্ত থাকছেন। বিশেষ করে খুচরো টাকার যোগাড়েই সকলে ব্যস্ত। মেলায় আসার সময় নেই. তাই বিক্রিও কমেছে। আগের বছরই এই মেলায় প্রতিদিন এক বস্তা ময়দা ও ৫০ কেজি বেসনের এসব গুড়কাঠি, চিনিকাঠি তৈরি করে বিক্রি করেছি। আর এ বার অর্ধেক বস্তার তৈরি কাঠির বিক্রি নেই। কোনও কোনও দিন কারিগরদের খরচই উঠছে না।’’ মালদহের মেহেরাপুরের আর এক ব্যবসায়ী সুদাম সাহা বলেন, ‘‘মানুষের কাছে এখন খুচরো টাকাই নেই. ব্যাঙ্কে গিয়েও মিলছে না।’’
যাঁর কাছে যে টুকুও বা খুচরো টাকা রয়েছে তা তারা দৈনন্দিনের চাল, ডাল, তেল, নুন, মাছ, সবজি কিনতেই বেশি ব্যবহার করছেন। মেলায় এসে অনেকেই আর এ সব খাবার কিনে খুচরো টাকা খরচ করছেন না. ফলে বিক্রি গত বছরের চেয়ে এবার ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছে। কী করে যে এবার সংসার চলবে তা ভাবতেই পারছি না।’’ কারণ, এই মেলা শেষ করে যে যে মেলায় যাবেন, সেখানেও একই পরিস্থিতি হবে।
মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের আর এক ব্যবসায়ী গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, পাঁচশো-হাজার টাকা বাতিল করে সরকার মানুষকে একেবারে পাগল করে ছেড়েছে।
সেই টাকা ব্যাঙ্কে কত আগে জমা দেবে সেটা নিয়েই মানুষ ব্যস্ত। পাশাপাশি সংসার চালাতে তো টাকা দরকার, সে টাকাও তো মানুষের হাতে নেই, রয়েছে ব্যাঙ্কে। তাই মানুষ সারা দিনই এখন ব্যাঙ্কমুখী। তিনি বলেন, ‘‘মেলায় আসছেন না, আমাদের বিক্রিও হচ্ছে না. সংসার কী ভাবে চালাব তা ভাবতেই পারছি না।’’