পূর্ত দফতরের এক কর্মীর আত্মহত্যার ঘটনাকে ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। বুধবার সকালে ক্লাব রোড সংলগ্ন সরকারি আবাসনের ছাদে বসে কার্বলিক অ্যাসিড খেয়ে ওই সরকারি কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে তাঁকে স্থানীয় নার্সিংহোম, ও পরে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আত্মঘাতী ওই সরকারি কর্মীর নাম বিপ্লব ইন্দ্র নিয়োগী (৪২)। তিনি পূর্ত দফতরের নর্দার্ন জোনের জলপাইগুড়ি দফতরের লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক ছিলেন।
গত ১৭ এপ্রিল পূর্ত দফতরের জলপাইগুড়ির ১৪ জন কর্মীকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বদলির নির্দেশ জারি হয়। তাঁদের মধ্যে বিপ্লববাবু ছিলেন অন্যতম। তাঁর বাড়ি কোচবিহারে।
কোচবিহারেই বদলি করা হয় তাঁকে। কিন্তু কর্মীদের আন্দোলনের জেরে ওই দিনই বদলির নির্দেশ বাতিল হয়ে যায়। প্রশ্ন উঠেছে, বাড়ির কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েও সেটা ভেস্তে যেতেই কি হতাশ হয়ে কো-অর্ডিনেশন কমিটি প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারী সমিতির এই সদস্য আত্মহত্যার রাস্তা বেছে নিয়েছেন। পূর্ত দফতরের নর্দার্ন জোনের জলপাইগুড়ি দফতরের ভারপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “বদলির নির্দেশ বাতিল হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে ওই নির্দেশের কোন সম্পর্ক নেই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ঘটনা। এখন মালদহে আছি এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।” জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথন বলেন, “পৃথক ভাবে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৭ এপ্রিল যে ১৪ জন কর্মীর বদলির নির্দেশ জারি হয় তাঁদের মধ্যে আপার ডিভিশন ক্লার্ক ছিলেন ১১ জন এবং লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক ৩ জন। তাঁদের মধ্যে ৮ জন কর্মী ছিলেন কো-অর্ডিনেশন কমিটি প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারী সমিতির নেতা ও সদস্য। বাকিরা তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের সমর্থক। নির্দেশ বাতিলের দাবিতে প্রথমে আন্দোলনে নামে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারী সমিতি। অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে দফতরের ইঞ্জিনিয়ার দেখা করতে অস্বীকার করেন। এর পরে তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী সংগঠনের নেতৃত্ব দফতরে ঢুকে ইঞ্জিনিয়ারকে ঘেরাও করেন। আন্দোলনে যোগ দেন তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি মিঠু মোহন্ত। ঘেরাও আন্দোলনের জেরে সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিট নাগাদ বদলির নির্দেশ বাতিল হয়। রাত ১১টা নাগাদ বদলির নতুন তালিকা বের হয়। সেখানে বিপ্লববাবুর নাম ছিল না।
প্রশ্ন উঠেছে, বদলির নির্দেশ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করে নতুন তালিকা কেমন করে প্রকাশ করা হল। দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা ওই বিষয়ে মুখ খোলেননি। কো-অর্ডিনেশন কমিটি প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারী সমিতির জলপাইগুড়ি পূর্ত দফতর ইউনিট কমিটির সম্পাদক কৌশিক সেন চৌধুরী বলেন, “আমাদের বদলি করা ছিল মূল উদ্দেশ্য। আমাকে বালুরঘাটে বদলি করা হয়েছে। বদলির তালিকায় কোন কারণে শাসক দলের কর্মী সংগঠনের কয়েকজনের নাম ঢুকে যাওয়ায় হুলস্থুল বাঁধে।” তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি মিঠু মোহন্ত ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “বদলির তালিকা ঠিক ছিল না ওই কারণে প্রতিবাদ করা হয়। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।”
বদলির নির্দেশ বাতিল হতে কি বিপ্লববাবু মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন?
কৌশিকবাবু বলেন, “না, তেমনটা নয়। কারণ, উনি জলপাইগুড়িতে থাকার কথা বলতেন। তবে বেশ কিছুদিন থেকে ওঁর মানসিক অবস্থা ভাল ছিল না। কেন মন খারাপ করে থাকেন জানতে চাইলে কিছু খুলে বলতেন না। যে কারণে সংগঠন থেকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দিয়ে কাউন্সিলিং করানোর কথা ভাবা হয়েছিল।” প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তবে কি ওই কর্মী কোন কারণে আর্থিক সমস্যার ভুগছিলেন। দেনায় জড়িয়েছিলেন? কৌশিকবাবুর স্ত্রী শম্পা দেবী ওই বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি। কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলতে থাকেন, “কেমন করে কি হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না।” ওই দম্পতির একমাত্র ছেলে বর্ণন ক্লাস টুতে পড়ছে। পরিবারের লোকজন ঘটনায় স্তম্ভিত। স্ত্রী জানান, কোন ফাঁকে ছাদে উঠেছিলেন টের পাননি। আচমকা শব্দ পেয়ে সিড়িতে দাঁড়াতে দেখে স্বামী পড়ে আছেন। তাঁর চিৎকার শুনে এলাকার লোকজন এসে বিপ্লববাবুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।