বাজেট পড়ছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। পিটিআই
কৌশিক চৌধুরী
প্রত্যাশা ছিল অনেক। আর প্রাপ্তি? অনেকেই বলছেন, ঝুলি কার্যত খালি। তাই মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের বাজেট বক্তৃতার পর হতাশ উত্তরবঙ্গবাসী। বিরোধীরা বলছেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের মধ্যবিত্ত থেকে চা বা পর্যটনের সঙ্গে জড়িতেরা একেবারেই হতাশ এ বাজেটে।’’ বিধানসভা ভোটের আগে যখন কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী উত্তরবঙ্গে এসেছিলেন, তিনি পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথাও বলেন। কিন্তু করোনার ধাক্কায় নড়বড়ে হয়ে যাওয়া এই শিল্পকে আলাদা করে কোনও সুযোগ সুবিধা এখনও পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বাজেট নিয়ে উত্তরবঙ্গের বণিকসভাগুলি চুপ। ঘরোয়া আলোচনায় তাঁরা বলছেন, ‘‘নতুন করে বলার তো কিছুই নেই।’’
আয়কর
কেন্দ্রীয় বাজেটে আয়কর নিয়ে হতাশ মধ্যবিত্ত, বিশেষ করে চাকুরিজীবীরা। গত দু’বছরের করোনা লড়াইয়ের পর এ বার অনেকেই আশা করেছিলেন, আয়করে আরও কিছুটা ছাড় মিললে সঞ্চয় বাড়ত। এর সঙ্গে সুদের হার বদল হলে মধ্যবিত্ত, বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্তরা কিছুটা আশা দেখতেন। কিন্তু এ বারের বাজেটে তেমন কোনও দিশা না দেখে হতাশ বেসরকারি টেলিকম সংস্থার আধিকারিক সঞ্চয়িতা সেন। তিনি বলেন, ‘‘আশায় তো পুরো জল ঢেলে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। করের বোঝা আর একটু কমলে বা সুদ বাড়লে আমাদের মতো চাকুরিজীবী মধ্যবিত্তদের উপকার হত।’’
চা বাগিচা
নির্মলা সীতারমণই উত্তরবঙ্গে এসে জানিয়েছিলেন, সাতটি চা বাগান অধিগ্রহণ করা হবে। তার পরে অনেক সময় বয়ে গিয়েছে। এ বারের বাজেটে তো চা শিল্প নিয়ে আলাদা কিছুই নেই। তাতে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির অন্যতম ভিত বলে পরিচিত চা শিল্প পুরোপুরি হতাশ। বাগান খোলা, নতুন বরাদ্দ, টি বোর্ডের প্যাকেজ, রফতানি— কোনও কিছুরই উল্লেখ করা হয়নি এ বারে। শুধুমাত্র নাবার্ডের মাধ্যমে এগ্রিকালচার স্টার্ট আপের বলে কয়েকটি শব্দ রয়েছে। বড় বাগান মালিকদের সঙ্গে পুরোপুরি হতাশ ক্ষুদ্র চা চাষিরাও। ক্ষুদ্র চা চাষি সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মনে হয় চা বাগিচা শব্দটা ভুলে গিয়েছেন। আর এত বিজেপি সাংসদ, মন্ত্রীরা দিল্লিতে কি কিছুই বোঝাতে পারেননি?’’
রেল
নানা আশ্বাস দেওয়ার পর এ বছর রেল বাজেটে উত্তরবঙ্গের ভাগ্যে তেমন কিছুই জুটল না। গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গ থেকে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন বিজেপি সাংসদরা। তার পরেও মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আরও একবার ব্যর্থতার দলিলই বাজেটের মাধ্যমে সামনে এল বলেই মনে করছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। কোনও প্রকল্প, ট্রেন, বড় পরিকাঠামো রূপয়াণের কথা নেই কেন্দ্রের । যদিও উত্তরবঙ্গের বিজেপি নেতাদের দাবি, কেবলমাত্র আটটি জেলা নয়, বরং সারা ভারতকেই রেল পরিষেবা দিতে হয়। বিজেপি নেতা তথা রেলবোর্ডের যাত্রী সুবিধা কমিটির উত্তরবঙ্গের সদস্য রথীন বসুর দাবি, ‘‘সার্বিক রেল বাজেট ভালই হয়েছে বলা যায়।’’
পর্যটন
রাজ্যের তো বটেই উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, তরাই বা ডুয়ার্সের জন্য সুনির্দিষ্ট করে কোনও প্রকল্প, প্যাকেজের ঘোষণা নেই বাজেটে। পর্যটন বিকাশে পিএম গতিশক্তি প্রকল্প, ২৫ হাজার কিমি রাস্তা, ৪০০ বন্দেভারত ট্রেন, ৮টি রোপওয়ে, ই-পাসপোর্ট, ঋণের মতো কিছু কথা বলা হলেও সেগুলি কোথায় হবে, তা বেশিরভাগই স্পষ্ট নয়। গ্রাম বিকাশ ও পর্বতমালা বলে একটি প্রকল্পের কথা পর্যটনের উন্নতিতে বলা হলেও বিস্তারিত কিছু নেই বলে জানিয়েছেন হিমালয়ান হসপিট্যালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সচিব সম্রাট সান্যাল।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিকাঠামো
পাহাড়ের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি থেকে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল এ বারও অধরা থেকে গেল উত্তরবঙ্গবাসীর জন্য। এশিয়ান হাইওয়ে, ইস্ট ওয়েস্ট করিডরের পর নতুন আর কোনও এক্সপ্রেসওয়ে হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। চিন সীমান্তের মতো স্পর্শকাতর বিষয় জড়িয়ে থাকলেও সেবকে করোনেশন সেতুর বিকল্প সেতুর উল্লেখ করা হয়নি বাজেটে। স্টেশন, বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণের কথাও নেই বলে অভিযোগ।
সমালোচনা
তৃণমূলের গৌতম দেব থেকে সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় সরকারের এই বাজেটকে পুরোপুরি ভাঁওতাবাজির বাজেট বলেই মনে করছেন। তাঁদের কথায়, এত সাংসদ, তার থেকে দু’জন আবার মন্ত্রী হয়েছেন, আছেন নতুন রাজ্য সভাপতিও, তার পরেও উত্তরের হাত শূন্য কেন? যদিও রাজু বিস্তার দাবি, ‘‘গতিশক্তি, বন্দেভারত ট্রেন, নতুন গ্রামীণ বিকাশ, পর্বতমালা প্রকল্পে উত্তরের শহরগুলিকে নিশ্চয়ই আসবে।’’ যা শুনে বিরোধীদের দাবি, ‘‘২০১৯ থেকে তিন বছরে যা এসেছে তাতেই সব স্পষ্ট।’’