প্রতীকী ছবি।
ছেলের নিথর দেহ আগলে বসে রয়েছেন শোকার্ত মা। চোখের জল মুছে গ্রামবাসীদের সঙ্গে ছেলের অন্ত্যেষ্টির জন্য চাঁদা তুলছেন করোনা-আবহে কর্মহীন বাবা। শনিবার সকালে এমনই ছবি দেখা গেল হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডী পঞ্চায়েতের অনাইল গ্রামে। অথচ, অনাইল থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস।
এ দিনই গ্রামে চলছে দুয়ারে সরকার শিবিরও। তার পরেও ‘সমব্যথী প্রকল্প’ নিয়ে অন্ধকারে অনাইল গ্রামের পুত্রহারা অসহায় দম্পতী বরুণ পাণ্ডে ও চন্দনা পাণ্ডে। পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। গ্রামবাসীদের দাবি, সমব্যথী প্রকল্প নিয়ে প্রচার না থাকায় টাকার অভাবে অন্ত্যেষ্টির জন্য চাঁদা তোলার ঘটনা আজও ঘটছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হবিবপুর ব্লকের বিডিও সুপ্রতীক সাহা।
মালদহ-নালাগোলা রাজ্য সড়কের ধারে ঝুপড়িতে বসবাস ওই দম্পতির। তাঁদের চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে শুক্রবার রাতে তৃতীয় ছেলে ভোলাশঙ্কর পাণ্ডের (৭) মৃত্যু হয়। পেটের যন্ত্রণা নিয়ে স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। বরুণ নিজের বাড়িতে হোটেল চালাতেন। লকডাউনের সময় হোটেল বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউন উঠে গেলেও আর্থিক কারণে হোটেল আর খুলতে পারেননি, দাবি বরুণের। তিনি দোকানে পুজো করে সংসার চালান।
এ দিন সকাল সাড়ে ৯টাতেও অন্ত্যেষ্টি হয়নি দেহের। বরুণ বলেন, অন্ত্যেষ্টির জন্য শশ্মানে ন্যূনতম কিছু খরচ রয়েছে। সেই খরচের টাকাও আমাদের হাতে নেই। এমন অবস্থায় গ্রামবাসীরা রাজ্য সড়কে দাঁড়িয়ে অন্ত্যেষ্টির টাকা জোগাড়ের জন্য চাঁদা তুলতে শুরু করেন। প্রতিবেশী চন্দনা দাস বলেন, “মৃত্যুর পরে ১২ ঘণ্টা কেটে গেলেও টাকার জন্য পরিবারের লোকেরা অন্ত্যেষ্টি করতে পারছে না। আর আমাদেরও তেমন সামর্থ নেই। তাই টাকা জোগাড়ে চাঁদা তুলতে হয়েছে।”
প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “সমব্যথী প্রকল্পে অসহায় পরিবারকে দুই হাজার টাকা করে দেয় সরকার। পঞ্চায়েতে গেলেই সেই টাকা পেয়ে যান পরিবারের লোকেরা।” বিষয়টি জানা নেই বলে জানিয়েছেন মৃতের পরিবারের লোকেরা।
প্রতিবেশী ভূপেন সমাজদার বলেন, “প্রশাসন, পঞ্চায়েতের উচিত প্রকল্পগুলি নিয়ে ঢালাও হারে প্রচার করা।” গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান রাজীব দাগা বলেন, “আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। যোগাযোগ করলেই সমব্যথী প্রকল্পে টাকা
দেওয়া হয়।”