রেল লাইনের উপর বুনো হাতির পাল। দূর থেকে তা দেখতে পেয়ে এমার্জেন্সি ব্রেক কষে ট্রেন থামান চালক। রক্ষা পায় বুনো হাতির দল। বুধবার তারই স্বীকৃতি জানাতে রেলের এক চালক এবং সহ চালককে ‘ম্যান অব দ্য মান্থ’ ঘোষণা করে পুরষ্কৃত করা হল। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডি আর এম চন্দ্রবীর রমণ তাঁদের দু’জনের হাতে এ দিন মানপত্র ও পুরস্কার তুলে দেন।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরস্কৃত ওই চালকের নাম যুবরাজ অমিত ও সহ চালকের নাম বিশ্বজিৎ পাল। দু’জনেই মালবাহী ট্রেনের চালক। ১৮ অগস্ট দিনহাটা থেকে ডেমু প্যাসেঞ্জার চালিয়ে নিয়ে শিলিগুড়ি যাচ্ছিলেন তাঁরা। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বনাঞ্চলের রাজাভাতখাওয়া ও কালচিনি রেল স্টেশনের মাঝে বিকেল ৩টে ২০ নাগাদ একপাল হাতি বাঁ দিক থেকে রেল লাইন পার করে ডান দিকের জঙ্গলে যাছিল। সঙ্গে সঙ্গে এমার্জেন্সি ব্রেক কষে ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেন তাঁরা। এই ঘটনায় উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের দুই চালক রীতিমতো খবরের শিরোনামে চলে আসেন।
বুধবার আলিপুরদুয়ার জংশনের ডিআরএম অফিসের কমিউনিটি হলে দুই চালকের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার পরে ডি আর এম চন্দ্রভীর রমণ বলেন, “আমাদের তৎপরতায় শেষ দুই বছর আলিপুরদুয়ার ডিভিশনে ট্রেনে কাটা পড়ে কোনও হাতির মৃত্যু হয়নি। বন্যপ্রাণীর প্রাণ বাঁচাতে দুই চালক যে কাজ করেছেন, তার জন্য আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের প্রত্যেক রেলের কর্মী গর্বিত।’’
যুবরাজ অমিত বলেন, ‘‘প্রচণ্ড গতিতেই চলছিলাম আমরা। ১২থেকে ১৩টি হাতি রেল লাইনের বাঁ দিকের জঙ্গল থেকে ডান দিকের জঙ্গলে যাওয়ার জন্য রেল লাইন পার হচ্ছিল। তৎক্ষনাৎ ব্রেক কষে গাড়ি দাঁড় করাই। বন্যপ্রাণী বাঁচাতে পেরে খুব ভাল লাগছে। পুরস্কার পেয়ে আরও ভাল লাগছে।’’
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের চিহ্নিত ২৭টি হাতি করিডরের মধ্যে ১৭টিই পড়ছে আলিপুরদুয়ারে। রেল সূত্রে পাওয়া খবরে, ২০১১ সালে ৭টি, ২০১২ সালে ৬টি, ২০১৩ সালে ১৯টি, ২০১৪ সালে ৫টি, ২০১৫ সালে ৯টি হাতি ট্রেনের ধাক্কায় বা ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায়। এর মধ্যে অধিকাংশ ঘটনাই ঘটেছে আলিপুরদুয়ার ডিভিশনে। যদিও রেল কর্তৃপক্ষের দাবি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণও করা হয়েছে। ফলে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি-মৃত্যু কমেছে। তবে পশুপ্রেমীদের অভিযোগ, হাতি করিডরে ১৫-২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলার কথা কিন্তু রাজধানীর মতো ট্রেনগুলি ৪০ কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে চলে। রেল অভিযোগ অস্বীকার করছে।