হাসপাতালের সামনেই দীর্ঘ ক্ষণ পড়ে রইলেন দুই মুমূর্ষু রোগী। নিজস্ব ছবি।
জলপাইগুড়িতে মায়ের দেহ কাঁধে নিয়ে ছেলের হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য গোটা রাজ্যে শোরগোল ফেলেছিল। কার্যত একই অসহায়তার ছবি ধরা পড়ল কোচবিহারে। একই অ্যাম্বুল্যান্সে দু’জন রোগীকে তোলা যাবে না। তার জন্য ভাড়া করতে হবে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স! কিন্তু দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করার মতো টাকা কোথায়? কোনও চালকই যেতে রাজি না হওয়ায় শেষে হাসপাতালের সামনেই দীর্ঘ ক্ষণ পড়ে রইলেন দুই মুমূর্ষু রোগী। শনিবার তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালের এই ঘটনায় অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের ‘দৌরাত্ম্য’ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, শুক্রবার বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম অবস্থায় তুফানগঞ্জের বলরাপুর-১ পঞ্চায়েতের চেকাডোরার বাসিন্দা প্রদীপ দাস এবং তাঁর স্ত্রী শিবানী দাসকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁদের স্থানান্তরিত করা হয় কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারের লোক অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করতে গেলে চালকেরা জানিয়ে দেন, একটি অ্যাম্বুল্যান্সে দু’জন রোগীকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। কিন্তু দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করার মতো সামর্থ না থাকায় তা নিয়ে টানাপড়েনের জেরে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে হাসপাতালের সামনে স্ট্রেচারেই পড়ে থাকলেন দুই রোগী। শিবানীর বাবা ফণী দাস বলেন, ‘‘আমার কাছে মাত্র ১ হাজার টাকা ছিল। ওই টাকায় দুটো অ্যাম্বুল্যান্সের জোগাড় করতে পারিনি। একটা অ্যাম্বুল্যান্সে কেউ-ই যেতে রাজি হল না!’’
ওই পরিবারের দাবি, বিষয়টি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে জানানো হয়। খবর পেয়েই হাসপাতালে আসেন শাসকদলের কয়েক জন নেতা। তাঁরাই প্রদীপ-শিবানীকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তুফানগঞ্জ পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল সহ-সভাপতি শাহানুর রহমানের দাবি, দ্বিগুণ ভাড়া চাওয়া হয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য। শাহানুর বলেন, ‘‘পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ফোন করে আমায় গোটা বিষয়টি জানান। তার পরেই আমি ছুটে আসি। অ্যাম্বুল্যান্স ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলি। তার পরেই অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা গিয়েছে।’’ শাসকদলের ওই নেতার আরও দাবি, হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্সটিও খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। বার বার অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি।
এই বিষয়ে তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ফজলে করিম মিঞা বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি জানলে এই ঘটনা ঘটত না।’’ হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স থাকা সত্ত্বেও কেন এই ঘটনা, তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তুফানগঞ্জের মহকুমাশাসক বাপ্পা গোস্বামী বলেন, ‘‘পরে দুই রোগীকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। আগামী দিনে যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সে বিষয়ে হাসপাতালের সুপারকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’