মর্মান্তিক: স্থানীয়দের সাহায্যে কাঠের চিতায় হাতির অন্ত্যেষ্টি করেন বনকর্মীরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
গত দু’বছরে পরপর দু’বার! উত্তরবঙ্গের তরাই এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় দুই দফায় তিনটি হাতি মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পশুপ্রেমী সংগঠনের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, ডুয়ার্সের মতো বাগডোগরা-নকশালবাড়ির রেলের লাইনটিও ধীরে ধীরে 'কিলার ট্র্যাক' হয়ে উঠছে। গত ২০১৭ সালের ১০ মে, ভোর চারটে নাগাদ একইভাবে নকশালবাড়ি ব্লকের কিরণচন্দ্র চা বাগান লাগোয়া এলাকায় শিলিগুড়ি থেকে বিহারের কাটিহারগামী ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের ধাক্কায় একটি পূর্ণবয়স্ক দাঁতালের মৃত্যু হয়। এ বার তরাইয়ের খড়িবাড়িতে দিলসারামজোতে ওই লাইনেই একসঙ্গে দুটি হাতির মৃত্যুর পর ‘কিলার ট্র্যাকের’ বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল।
ডুয়ার্সের জঙ্গল পথ নিয়ে বন দফতর ও রেলের মধ্যে বৈঠক হয়। কিন্তু তরাইয়ের এলাকা নিয়ে বৈঠক হয় না বলেই অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৭ সালেও ঘটনার পর রেল এবং বন দফতরের তরফে তদন্তের শেষে এলাকায় ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গ উঠেছিল। কিন্তু তা কার্যকরী হয়নি। বন দফতরের মুখ্য বনপাল (হিল সার্কেল) দেবাংশু মল্লিক অবশ্য বলেন, ‘‘রেলের সঙ্গে আমরা তরাই এলাকাটি নিয়ে আলোচনা শুরু করছি।’’ বন দফতরের একাংশ অফিসার জানান, প্রতি বছর শীতের মরশুমে কার্শিয়াং ডিভিশন থেকে বহু হাতি তরাইয়ে নামে। টুকুরিঝার জঙ্গলের দিক থেকে কিরণচন্দ্র চা বাগান এলাকা হয়ে বাগডোগরার কেষ্টপুরের দিকে হাতির দলগুলি যায়। কয়েকটি দল নেপাল সীমান্তের মেচি নদীর ধার দিয়ে ওপারের জঙ্গলেও ঘোরাফেরা করে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ফসল বাঁচাতে নেপালের দিকে ফেন্স দেওয়া রয়েছে। তাতে হাতির পাল বাধা পেয়ে নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ির বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। স্বাভাবিক পথে বাধা পেয়ে হাতিগুলি ফিরছে চারলেনের উঁচু এশিয়ান হাইওয়ে-২-এর দিকে। এটা এবং ৩১সি জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে তারা এপার ওপার শুরু করেছে। আর সেখানেই সমান্তরালভাবে রেলের লাইন থেকে যাওয়াতেই শুরু হয়ে বিপত্তি।
পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাফের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলছেন, ‘‘বন দফতরকে আগাম পরিকল্পনা নিয়ে পালগুলিকে মহানন্দায় ঢোকার ব্যবস্থা করতে হবে।’’ পরিবেশপ্রেমী অন্য সংগঠনের সভাপতি কৌস্তভ চৌধুরী বলেছেন, ‘‘নতুন নতুন হাতির করিডর ঘোষণা জরুরি।’’