বাসিন্দাদের শুভেচ্ছা বার্তা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষের। নিজস্ব চিত্র।
ছিটমহলের ‘ভোটব্যাঙ্ক’ কাছে টানতে ডান-বাম সব দলই নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি শুরু করেছে। রবিবার ছিটমহলে সভা করল তৃণমূল। রবিবার তিনটি ছিটমহল এলাকায় সভা করেন নাটাবাড়ির বিধায়ক তথা তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। এদিন প্রথমে রবীন্দ্রনাথবাবু মধ্য মশালডাঙা এলাকায় যান। সেখানে সভা সেরে পোয়াতেরকুঠি ও করলা ছিটমহল এলাকায় গিয়ে দুটি সভা করেন তিনি। তিনটি এলাকাতেই ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে তৈরি মঞ্চে সভা করেন তিনি। তবে সভামঞ্চের লাগোয়া এলাকা তৃণমূলের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি, ব্যানার ও পতাকায় মুড়ে দেওয়া হয়। সভায় রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ছিটমহলগুলির দ্রুত উন্নয়নের ব্যাপারে তিনি চেষ্টা করছেন। খুব শীঘ্রই কোচবিহারে তিনি আসবেন।”
মধ্য মশালডাঙার সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহারে এলে তাঁকে ছিটমহলের বাসিন্দাদের তরফে এলাকায় আসার আমন্ত্রণও জানান হয়। রবীন্দ্রবাবুও পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহারে এলে বাসিন্দাদের সেখানে যাওয়ার আর্জি জানান। ছিটমহল সমস্যা সমাধানের কৃতিত্বও দাবি করে রবীন্দ্রনাথবাবুর সংযোজন, “মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই ছিটমহলের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়িত হয়েছে।”
রাজনৈতিক মহলের অবশ্য ধারণা, মুখ্যমন্ত্রী পাশে রয়েছেন বার্তা দেওয়ার মোড়কে এদিন থেকেই ছিটমহলের বাসিন্দাদের মন পেতে জনসংযোগ শুরু করল তৃণমূল নেতৃত্ব। সেজন্যই প্রতিটি সভাতেই এলাকার উন্নয়নের ঢালাও প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি যে কোন সমস্যার সমাধানে দলের একাধিক স্থানীয় ব্লক নেতার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শও দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি।
কিন্তু ওই রাজনৈতিক তৎপরতার কারণ কী?
দলের অন্দরের একটি সূত্রের ব্যাখা, ভারতের আওতাভুক্ত হওয়া ছিটমহল এলাকায় ২০১১ সালের সুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। পূনর্বাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের আওতাভুক্ত হয়ে যাওয়া ভারতের ছিটমহল এলাকা থেকেও অন্তত এক হাজার বাসিন্দা ঠিকানা বদল করবেন। ফলে একসঙ্গে বড়সড় ভোট ব্যাঙ্ক তৈরি হবে। ওই ভোট ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি নিজেদের হাতে রাখতেই শাসক দলের এমন আগাম তৎপরতা।
তৎপরতা শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দরেও। বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “মমতা বন্দোপাধ্যায়ের জন্য ছিটমহল বিনিময় হয়েছে দাবি করে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে এদিন ছিটমহলে ব্যানার দেওয়ার খবরও পেয়েছি। ভোট ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রণেই ওই চেষ্টা স্পষ্ট হয়েছে। তবে এসবে আখেরে লাভ হবে না। এলাকার মানুষ জানেন প্রধানমন্ত্রীর জন্যই ওই বিনিময় সম্ভব হয়েছে।” ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহকারী সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “ ছিটমহলের ওই এলাকা এখন ভারতের অংশ। ফলে যে কোন দলের নেতারা এলাকায় যেতে পারেন। এটাই সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ।”