অ্যানির সাফল্যে গর্বিত বাবাও

দিল্লি থেকে ফোনে অ্যানি জানালেন, ‘‘বাবা আমার রূপান্তরকে কখনওই সমর্থন করতে পারেননি, কিন্তু আজ তিনি ভীষণ খুশি। আমার বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি সকলেই ভীষণ আনন্দিত। আর এটাই আমার সাফল্য।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা  

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৯ ০৮:০২
Share:

সফল: এ বার কি বিশ্বজয়? দিল্লিতে অ্যানি। নিজস্ব চিত্র

সে দিন পাশে ছিলেন না নিজের বাবাও। আজ তাঁর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত শাশুড়িও। অনীক দত্ত থেকে ‘রূপান্তরিত’ অ্যানি দত্ত রবিবার দিল্লিতে জয় করলেন মিস ট্রান্স ইন্ডিয়ার খেতাব। দীর্ঘ দিনের টানাপড়েনের শেষে বাবা রণজিৎ দত্ত ফোন করে মেয়েকে বলেছেন, ‘‘তুই আমাদের গর্ব।’’ সেরার শিরোপা জিতে গর্বিত মেয়ে জানালেন, নিজের মানুষদের পাশে পাওয়াটাই আজ সব থেকে আনন্দের।

Advertisement

দিল্লি থেকে ফোনে অ্যানি জানালেন, ‘‘বাবা আমার রূপান্তরকে কখনওই সমর্থন করতে পারেননি, কিন্তু আজ তিনি ভীষণ খুশি। আমার বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি সকলেই ভীষণ আনন্দিত। আর এটাই আমার সাফল্য।’’ তাঁর সাফল্যে আপ্লুত শাশুড়ি মৌসুমী চক্রবর্তী এক কথায় বললেন, ‘‘আমাদের বৌমা অনন্যা।’’

শুধু তাঁরাই নন, শহরের নাম উজ্জ্বল করেছেন বলে আজ অভিনন্দন জানাচ্ছেন বালুরঘাটের অনেকেই। তবে সে দিনের কটূক্তি থেকে আজকের এই শুভেচ্ছার বন্যা—পথটা সহজ ছিল না অ্যানির কাছে।

Advertisement

বালুরঘাটের চকভৃগু এলাকার বাসিন্দা তথা জলপাইগুড়ির ‘বৌমা’ অ্যানি ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের পোশাক পরতে পছন্দ করতেন। ছেলে হয়েও কথাবার্তা, চালচলন অমন নরম-সরম, সুললিত! সে তো একান্তই মেয়েদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য—এ হেন গতানুগতিক সামাজিক ধারণার শিকার হতে হয়েছে আকৈশোর। কিন্তু ক্রমেই নিজের পুরুষ শরীরে নারীর অস্তিত্ব অনুভব করতে থাকেন অনীক। সব কিছুর উপরে সেই অনুভূতিকেই গুরুত্ব দেন দেহ আর মনের এই টানাপড়েন চলল বেশ কিছু দিন। বিষয়টি গড়াল মনোচিকিৎসকের চেম্বার পর্যন্ত। শেষ অবধি মনস্থির করলেন। শুরু হল অনীক থেকে অ্যানি হওয়ার লড়াই।

তিনি জানালেন, আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। তার পরে বালুরঘাটে একটি নাচের স্কুল খোলেন, তৈরি করেন মেকআপ স্টুডিয়ো। কলকাতায় মডেলিং করতে করতেই জলপাইগুড়ির সাগ্নিক চক্রবর্তীর সঙ্গে প্রেম। অনেক বাধা পেরিয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বরে সাগ্নিকের সঙ্গে বিয়েও হয়। পাশে দাঁড়ান বাবা-মা, শ্বশুর-শ্বাশুড়িও। আর জীবনসঙ্গীর এই সাফল্যে গর্বিত সাগ্নিক বলেন, ‘‘কল্পনাই করতে পারিনি একেবারে প্রথম হবে! তবে ওর প্রতিভার উপরে আমার আস্থা ছিল। আজ এত দূর এসেছে শুধু ওর নিজের যোগ্যতায়।’’

বিয়ের আগেই অবশ্য রূপান্তরিত হন অ্যানি, হয়ে যান নারী। মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতার অডিশনও বিয়ের আগেই। পশ্চিমবঙ্গ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে গোটা দেশের মধ্যে সেরা ১২-তে নির্বাচিত হন। তাঁদের নিয়েই দিল্লিতে শেষ রাউন্ডের প্রতিযোগিতা ছিল। রবিবার সন্ধেয় অ্যানি সব রাউন্ডেই প্রথম হয়ে এই খেতাব জেতেন। ‘‘এ বার লক্ষ্য মিস ট্রান্স ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা জেতা।’’ বালুরঘাটবাসীরও আশা, অ্যানি এ বার গোটা দেশের নাম উজ্জ্বল করুক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement