দাবি: তৃণমূল নেতাদের কাছে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরানোর আর্জি আটকে পড়া যাত্রীদের। নিজস্ব চিত্র
সকালে টিফিনের ব্যবস্থা করলেন কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার। দুপুরে রান্না করে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করলেন স্থানীয় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। কিছুটা স্বস্তি মিলল। কিন্তু উদ্বেগ গেল না। কবে, কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন, সেই চিন্তায় থেকেই গেল নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে আটকে থাকা যাত্রীদের। বৃহস্পতিবার থেকে টানা দু’রাত কনকনে ঠান্ডায় স্টেশনের মেঝেতেই পড়ে ঘুমিয়েছেন জনাপঞ্চাশেক যাত্রী।
নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে অসমের উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে গত দু’দিনে বেশ কিছু ট্রেন বাতিল ও অনেক ট্রেনের যাত্রাপথ কমিয়ে দিয়েছে রেল। শনিবারও কয়েকটি ট্রেন বাতিল হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাতে নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে আসার পর বাতিল করা হয় আগরতলামুখী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। ফলে চরম বিপাকে পড়েন ওই ট্রেনে ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা প্রায় পঞ্চাশজন যাত্রী। ওই রাত থেকেই তাঁদের একটা বড় অংশের জায়গা হয়েছে টিকিট কাউন্টারের পাশে মেঝেয়। কনকনে ঠান্ডায় কেউ কেউ প্ল্যাটফর্মেই শুয়ে পড়েন। শুক্রবার সারাদিন প্ল্যাটফর্মেই কেটেছে ওঁদের। শুক্রবার রাতেও ওঁদের রাত কেটেছে সেখানেই।
শনিবার সকালে স্টেশন মাস্টার সুনীলকুমার দত্তের উদ্যোগে ওই যাত্রীদের টিফিনের ব্যবস্থা করা হয়। দুপুরে স্থানীয় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা যাত্রীদের খাবারের ব্যবস্থা করেন। সকালে স্টেশনে গিয়ে ওই যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী ও বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। মৃদুল পরে বলেন, ‘‘আমরা আটকে পড়া এই যাত্রীদের পাশে রয়েছি। স্টেশনে ওঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেই বিষয়টি দেখতে রেলকর্তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কর্তাদেরও যাত্রীদের অবস্থার কথা জানানো হয়েছে।’’
তবে এ দিন রেলকর্তা ও মৃদুলদের কাছে আটকে পড়া যাত্রীদের একটাই প্রশ্ন ছিল, বাড়ি ফেরার কী ব্যবস্থা হবে। যদিও কেউই এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনও উত্তর দিতে পারেননি। ত্রিপুরার ধর্মনগরের বাসিন্দা বিপ্লব দেবনাথ বীরভূমের একটি কলেজে বিএড-এর ছাত্র। কলেজের ছুটিতে আরও কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন বিপ্লব। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ছাত্র। পকেটে খুব বেশি টাকা নেই। এমন পরিস্থিতিতে এভাবে আটকে পড়ায় ভীষণ সমস্যায় পড়েছি। বাড়ির লোকও খুবই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।’’
উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির বাসিন্দা লক্ষ্মী মণ্ডল আগরতলায় কাকার বাড়িতে যাচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি একাই আগরতলা যাচ্ছিলাম। মাঝপথে এভাবে আটকে পড়ায় বাড়িতে আমার মেয়েদের পাশাপাশি কাকার বাড়ির লোকেরাও চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।’’
ওই স্টেশনের কর্তব্যরত এক কর্তা এ দিন জানালেন, পরিস্থিতি শান্ত হলে উপরতলা থেকে নির্দেশ এলেই ফের ট্রেন ছাড়বে। তবে আটকে পড়া যাত্রীদের স্টেশনে থাকতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেটা দেখা হচ্ছে বলে তিনি আশ্বাস দেন।