চারপাশ ঝকঝকে। তাই সকাল থেকেই উত্তর আকাশে চোখ রাখলে দেখা মিলেছে বরফে মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘার। নভেম্বরের গোড়াতে সারা দিন এ ভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা শেষ কবে মিলেছিল, তার উত্তর পাচ্ছেন না অনেকেই।
ডেলোর ভিউ পয়েন্টও আর কুয়াশা মোড়া নয়। বরং ঝকঝকে তিস্তা থেকে সূর্যের আলো ঠিকরে আসছে ওপরে। লাভা হোক বা রিশপ, সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত মাত করে দিচ্ছে প্রতিদিন। এমন সোনা রোদ মাখা সময়ে সকাল বিকাল নিয়ম করে বাইসন, গন্ডার আর হাতিও দেখা যাচ্ছে গরুমারার নজরমিনারগুলোর কাছে। তাই সব মিলিয়ে জমে উঠেছে পাহাড়, ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসা। ২০১০ আর ২০১৪-১৫র রেকর্ড ব্যবসা হয়েছিল। এ বার সেই রেকর্ড ভাঙবে বলেই আশা পর্যটন ব্যবসায়ীদের।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন এতোয়ার কর্মকর্তা সম্রাট সান্যাল যেমন বললেন ‘‘ব্যবসা এখন দারুণ চলছে। ডুয়ার্স আর পাহাড়কে দেখার সেরা সময় যে এখনই, পর্যটকরা সেটা এ বারে বুঝে ফেলেছেন। কুয়াশা বৃষ্টি কোনটাই এ সময় বাধা হবে না। তাই আমরাও রেকর্ড ব্যবসার দিকে তাকিয়ে রয়েছি।’’
খুব খুশি ছোটও পর্যটন ব্যবসায়ীরাও। চালসার গাড়ি ব্যবসায়ী গোপাল সরকার যেমন কালীপুজোর ঠিক আগে পুরানো পুঁজি ভাঙিয়ে নতুন গাড়ি কিনেছেন। গাড়ি কেনার পর এক দিনও ভাড়া মেলেনি এমনটা হয়নি তাঁর। বৃহস্পতিবারও যেমন লাভা, ডেলো কালিম্পঙের দিকে ভাড়া ছিল তাঁর। পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, একটি মাঝারি মানের রিসর্ট চালাতে গেলে বছরে অন্তত ১০০টি পর্যটন ব্যবসার দিনের প্রয়োজন। গত দু’বছরে গরুমারা, মূর্তি, লাটাগুড়ি এলাকাতে যেখানে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে গড়ে ৫৫ দিনের ব্যবসা হয়েছিল সেখানে এ বছর এক মাসেই ৩০ দিনের ব্যবসা হয়ে গিয়েছে। বাকি দু’মাসেও সকলের গড়ে ৪৫ দিনের ‘বুকিং’ হয়ে আছে।
• লাভা রিশপে থাকা ৬০টি বেসরকারি রিসর্টের সম্মিলিত ব্যবসা গত দুই বছরে ৭কোটি পেরোতে পারেনি।
• এবারে তা ইতিমধ্যেই ৮কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে ।
• ডিসেম্বরের শেষে তা ১০কোটি পেরোতে পারে বলে ধারণা।
• মালবাজার মহকুমায় থাকা ১৪০টি বেসরকারি রিসর্টের বার্ষিক ব্যবসার পরিমাণ গত চার বছরে ১৫ কোটি না ছাড়ায়নি।
•এ বার এখনই তা ১৩ কোটিতে পৌছে গিয়েছে।
• গত কিছু বছরে পাহাড় এবং ডুয়ার্সে গড়ে যেখানে ১০০ থেকে ১১৫দিনের বার্ষিক পর্যটন দিবস মিলেছে। সেখানে এ বছর তা ১৩০ পেরোতে পারে।
গরুমারা ট্যুরিজম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় যেমন বললেন, ‘‘এ বছর ব্যবসা অন্য সব বছরের থেকে ভাল, ডিসেম্বরের গোটা মাসের আগাম বুকিং হয়ে গিয়েছে এমন রিসর্টও প্রচুর। সরকারি বনবাংলো, যেমন গরুমারার ধুপঝোরা বিটের গাছবাড়ি রিসর্ট সেখানে চিত্র আরও নজরকাড়া। আগামী জানুয়ারি মাসের প্রতিটি শনি ও বেশ কিছু রবিবারেরও বুকিং হয়ে রয়েছে সেখানে।’’
ডুয়ার্সগামী কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস নিউ মাল জংশনে নামলেই সেখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ জন পর্যটক নামছেন বলেও রেল সূত্রে জানানো হয়েছে।
এই পর্যটকের সংখ্যাও গত দুবছরের নিরিখে বেশি বলেই রেলের দাবি। কালীপুজোর পরে কলকাতার বিধাননগর থেকে আসা সন্দীপন নাগ যেমন ট্রেন থেকে নেমেই ডেলো যাওয়ার গাড়ি ৩ হাজার টাকায় ভাড়া করে ফেললেন। যাওয়ার আগে শুধু বললেন, ‘‘কলকাতায় এখনও এসি চলছে। জ্যাকেট, মাফলার এগুলোর প্রতি সুবিচার করতেই এখানে আসা।’’
উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক অবস্থাই পর্যটনের পক্ষে সুখবর নিয়ে আসছে। যে কারণে উৎসবের মরসুম বিদায় নিলেও ডুয়ার্স জুড়ে যে পর্যটনের উৎসব চলছে তাতে রেকর্ড ভেঙে দেওয়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই মত সকলের।